দুর্ঘটনার পরে, দু’নম্বর জাতীয় সড়কে গলসি উড়ালপুলের কাছে। নিজস্ব চিত্র
মৃত্যুশোকের মাঝেই আবার দুর্ঘটনা।
রাতে বালিবোঝাই লরি থেঁতলে দিয়েছিল যুবককে। সকালে ময়না-তদন্তের পরে দেহ নিয়ে ফেরার সময় ট্রাকের ধাক্কায় জখম হলেন মৃত দশরথ বাগদির (২০) জ্যাঠা-সহ ১৭ জন। শনিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে গলসি উড়ালপুল পেরিয়ে ভারত কাটিং-এ ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। আহতদের মধ্যে রামাপদ বাগদি, খোকন বাগদি ও হারা বাগদিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার পরেই এলাকায় গোলমাল, বিক্ষোভ শুরু করেন গলসির রানাডি গ্রামের বাসিন্দারা। আরও একটি লরিতে চড়ে এসে ক্ষতিপূরণের দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধেরক চেষ্টা করেন তাঁরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে রাজার সেরে শিল্ল্যা রোড ধরে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন দশরথ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বালিবোঝাই একটি লরি তাঁকে ধাক্কা দেয়। রাস্তায় পড়ে যান পেশায় দিনমজুর দশরথ। পরে আরও কয়েকটি লরি তাঁর মাথা থেঁতলে দিয়ে যায় বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। যদিও কোনও গাড়িরই হদিস মেলেনি। বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান ওই যুবক। শনিবার ময়না-তদন্তের পরে দশরথের দেহ নিয়েই বাড়ি ফিরছিলেন পরিজনেরা। ছোট একটি ট্রাকে প্রায় ২৫ জন ছিলেন। তখনই আসানসোলের দিক থেকে আসা একটি লরি ধাক্কা মারে তাঁদের।
পুলিশ জানায়, জাতীয় সড়কের কলকাতামুখী লেনে মেরামতির কাজ চলছে। তাই এ দিন গলসি থেকে গলিগ্রাম পর্যন্ত আসানসোলের দিকের লেন দিয়েই দু’দিকের যাতায়াত চলছিল। পুলিশের দাবি, তার জেরেই ঘটে দুর্ঘটনা। মৃতের দাদা সাধন বাগদি, প্রতিবেশি মিঠুন বাগদিরা বলেন, ‘‘আমাদের গাড়িটি রাস্তার বাঁ দিক ধরে যাচ্ছিল। উল্টো দিক থেকে লরিটি আরও একটি লরিকে ওভারটেক করে আসার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখোমুখি ধাক্কা মারে।’’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একেই ব্যস্ত রাস্তা। তারপরে মেরামতির সময় ঠিক মতো যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। ফলে বারবার দুর্ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগে আসানসোলমুখী লেনে কাজ হওয়ার সময় লরি ও মোটরভ্যানের ধাক্কায় মারা যান গলসির কৈতারা গ্রামের এক বাসিন্দা। জাতীয় সড়কের এক কর্তার অবশ্য দাবি, যান নিয়ন্ত্রণের সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এক লেনে গাড়ি চলাচলের সময়েও ওভারটেক করার প্রণবতা কমে না। তাতেই বিপদ বাড়ে আরও।
অভিযোগ রয়েছে শিল্ল্যা-কলকাতা রাস্তা নিয়েও। বাসিন্দাদের দাবি, নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়ায় বেপরোয়া দৌড়য় বালিবোঝাই লরিগুলি। তাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাতের ঘটনার কয়েকদিন আগেও ওই লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় জাগুলিপাড়ার এক যুবকের।
লরির চালকদের দাবি, দামোদর নদের শিল্ল্যার একাধিক বালি খাদান থেকে বালি নিয়ে কলকাতা শহর-সহ আশাপাশে বিক্রি করা হয়। কলকাতায় সকাল থেকেই নো-এন্ট্রি চলে। তাই দুপুরে বালি বোঝাই করে রাতে বালি পৌঁছে দিয়ে সকালের আগেই কলকাতা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন থেকেই পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শিল্ল্যা রোডে নো-এন্ট্রি লাগিয়েছে পুলিশ। তাই সন্ধ্যের মধ্যে বালি বোঝাই করে রাতে কলকাতা পৌঁছতে বেপরোয়া ছুটতে হচ্ছে বলে মেনে নিচ্ছেন তাঁদের একাংশ।
গলসি থানার এক পুলিশ কর্তার দাবি, শিল্ল্যা রোডের বিভিন্ন স্কুলে প্রায় হাজার খানেক ছেলেমেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যের পরে গন্তব্যে পৌঁছতে গাড়ি চালকেরা গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। গলসি ১ ব্লকের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ফজিলা বেগম বলেন, ‘‘পরীক্ষার কারণে দিনে বেপরোয়া বালির গাড়ি যাতে না ঢোকে তা পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে। রাতে বিষয়টি দেখার কথা বলা হবে।’’