হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আহতদের। নিজস্ব চিত্র।
গলিত লোহা ছিটকে দগ্ধ হয়েছেন দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের (ডিএসপি) পাঁচ কর্মী। বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে কারখানার স্টিল মেল্টিং শপের বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগে। আহতদের প্রথমে দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাঁদের বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টিল মেল্টিং শপের বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগের কনভার্টারে ‘লিক’ হলে আচমকা বিপুল পরিমাণ জল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। গলিত ধাতুর সংস্পর্শে সেই জল আসতেই বিস্ফোরণ হয়। গলিত লোহা ছিটকে লাগে কর্মরত সিনিয়র ম্যানেজার পৃথ্বীরাজ রায়, দু’জন ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস-সহ আট জনের শরীরে। পৃথ্বীরাজ, সিনিয়র টেকনিশিয়ান সোমনাথ ঘোষ, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস সর্বজিৎ ঢাঙর ও বিনয় কুমার হরিজন এবং ঠিকা শ্রমিক চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁদের ডিএসপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের বিধাননগরের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রথম চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার।
দুর্ঘটনার পরেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হন। দুপুরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয় সাতটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের। এক ঘণ্টার বেশি চলে সেই বৈঠক। শ্রমিক নেতারা দাবি করেন, জল ‘লিক’ হওয়ার বিষয়টি ১৬ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষের তরফে ইডি (ওয়ার্কস) দিব্যেন্দু ঘোষ, সিজিএম (সেফটি) সঞ্জয় শ্রীবাস্তব, সিজিএম (পিঅ্যান্ডএ) একে শরণ, জিএম (প্ল্যান্ট পার্সোনেল) রানা মজুমদার। ছিলেন সিটু নেতা ললিত মিশ্র, আইএনটিটিইউসি’র প্রশান্ত চৌধুরী, এআইটিইউসির শম্ভুচরণ প্রামাণিক, আইএনটিইউসি’র কৌশিক মুখোপাধ্যায়, বিএমএসের মানস চট্টোপাধ্যায়, এইচএমএসের অরূপ রায়, এআইটিইউসির বিশ্বনাথ মণ্ডল। সূত্রের খবর, আধিকারিকদের সামনে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, নিয়মিত ‘সেফটি কমিটি’র বৈঠক হয়। কিন্তু কাজের কাজ হয় না। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দেন।
সিটুর বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ইস্পাত কারখানা গোটা বিশ্বেই দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে চিহ্নিত। কিন্তু ডিএসপি’র পরিস্থিতি ভয়াবহ। কর্তৃপক্ষ চরম উদাসীন। স্থায়ী পদে নিয়োগ নেই। ঠিকা শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগানো হচ্ছে। তাঁদের ওই কাজ করার কথাই নয়।’’ সিটুর বক্তব্য, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস-রা দুর্ঘটনার শিকার হলে আইনে তাঁদের ক্ষতিপূরণ বা চাকরি দেওয়ার দায় সংস্থার নেই জেনেও তাঁদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগানো হচ্ছে।
এআইটিইউসি নেতা শম্ভুচরণ প্রামাণিক, আইএনটিইউসি নেতা রজত দীক্ষিতের অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এই দুর্ঘটনা। দিনের পর দিন ‘লিক’ হচ্ছে। তার মধ্যেই উৎপাদন হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সব জানতেন। আগে ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কনভার্টার অপারেটর বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে ফের এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দিনের পর দিন জলের সঙ্গে গলিত লোহা মিশছে। তার মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’’
ডিএসপি’র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময়ই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা ঘটে। এ দিন কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখবেন কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।’’