এই এলাকাতেই ঘটনা বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
রাত পোহালেই শহরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে অবরোধ তুলতে গিয়ে ‘ছিনতাই’ হল পুলিশেরই সার্ভিস রিভলভার! শুক্রবার বর্ধমান শহরের কাটোয়া রোডের উপরে বাজেপ্রতাপপুরের চারখাম্বার ঘটনা। এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসীর একাংশ।
জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, যাঁর কাছ থেকে রিভলভার ছিনতাই হয়েছে, বর্ধমান থানার সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টরের এএসআই) বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে তাঁর গাফিলতিও মিলেছে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ধস্তাধস্তির সময়ে অবরোধকারীরা এএসআই-এর সার্ভিস রিভলভার নিয়ে পালিয়েছে। আমরা মামলা রুজু করে তদন্ত করছি।’’
ঘটনার সূত্রপাত একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান-কাটোয়া পুরনো ওভারব্রিজ থেকে নামলেই চারখাম্বা মোড়। সেখানেই শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বর্ধমানগামী একটি ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হয় হরিনারায়ণপুরের বিদ্যাসাগরপল্লির বাসিন্দা সাইকেল আরোহী বিজু শর্মার (৪৫)।
পুলিশ জানায়, ওই ওভারব্রিজের পাশেই রেলের উড়ালপুল ও সংযোগকারী রাস্তার কাজ চলছে। কিন্তু সংযোগকারী রাস্তাটির চার দিকে দীর্ঘ সময় অন্ধকার হয়ে থাকছে। অতীতেও সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেতু নির্মাণকারী সংস্থা ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড’ বা ‘আরভিএনএল’-এর কাছে বারবার মোড়ে পথবাতি বসানোর দাবি জানানো হলেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার পরেই পথবাতির দাবিতে দেহ আগলে রেখে এলাকাবাসীর একাংশ অবরোধ শুরু করেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে এসে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে পুলিশ। অভিযোগ, সেই সময়ে পিছন দিক থেকে চার-পাঁচ জন অবরোধকারী পুলিশের উপরে লাঠি, বাঁশ নিয়ে হামলা চালান। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, “পুলিশকে লাঠির বাড়িও মারে কয়েক জন। তার পরেই এক জন এএসআই ও দু’জন কনস্টেবল পিছন দিকে তাকিয়ে দেখেন, প্রায় ৪০ জন অবরোধকারী তেড়ে আসছেন। পুলিশকর্মীরা অন্ধকারে ছুটতে ছুটতে শোলাপুকুরের একটি বাড়িতে লুকিয়ে পড়েন।’’ খবর পেয়ে ডিএসপি (সদর) শৌভিক পাত্র, বর্ধমানের আইসি পিন্টু সাহা বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় যান। উদ্ধার করা হয় তিন পুলিশকর্মীকেই।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উদ্ধার হওয়ার পরে চারখাম্বা মোড়ে আসার সময়েই এক এএসআই বুঝতে পারেন সার্ভিস রিভলভারটি তাঁর কাছে নেই। তাঁর দাবি, “অবরোধ তুলতে গেলে কোমরে মারা হয়। অবরোধকারীরা তেড়ে আসছে দেখে প্রাণ বাঁচাতে এক জনের বাড়িতে আশ্রয় নিই। সম্ভবত সেই সময়ে রিভলভারটি খোয়া গিয়েছে।’’ এর পরেই ডিএসপি (সদর) শৌভিকবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সার্ভিস রিভলভার সামলে রাখতে পারেন না!”
পুলিশ রাতভর রিভলভারের সন্ধান করলেও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেটির খোঁজ মেলেনি। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর মহম্মদ আলির দাবি, “আলোর দাবিতে অবরোধ হচ্ছিল। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। তবে এই ঘটনায় বহিরাগতেরাই গোলমাল পাকিয়েছে।’’