ধস্তাধস্তি: দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটকে ‘প্রহসন’-এ পরিণত করা হয়েছে অভিযোগ করে শুক্রবার ছ’ঘণ্টার বন্ধ ডাকে বামেরা। সেই বন্ধে জেলা জুড়ে জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি বলেই জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তবে দুর্গাপুরে বন্ধ সমর্থকদের মিছিলে পুলিশ বাধা দেওয়ায় গোলমাল বাধে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন সকাল থেকে জনজীবন ছিল রোজকার মতোই স্বাভাবিক। স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস, দোকান, হাটবাজার সবই খোলা ছিল দুর্গাপুর ও আসানসোলে। বাস, ট্রেনও চলেছে স্বাভাবিক ছন্দে। বন্ধ ‘সফল’ করতে সে ভাবে দুই শহরের কোথাও খুব একটা পথে নামতে দেখা যায়নি বামেদের।
তবে দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাজারে কয়েকশো বাম কর্মী-সমর্থক জড়ো হন। হাতে পতাকা নিয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায়সরকারের নেতৃত্বে তাঁরা মিছিল করে এগোতে থাকেন। স্টেশন চত্বরে ঢুকতেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। বাধা সরিয়ে মিছিল এগোতে গেলেই ‘কড়া মনোভাব’ নেয় পুলিশ। পঙ্কজবাবুকে ধরে পুলিশ টানাটানি করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সময়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘গায়ে হাত দেবেন না’। তিনি বাধা দিলে পুলিশ পঙ্কজবাবুকে জোর করে নিয়ে যায় বলে সিপিএম জানায়। বাকি পুলিশকর্মীরা মিছিলে থাকা অন্যদেরও এলাকা থেকে সরানোর চেষ্টা করে। এর পরেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। শেষমেশ ২৬১ জন বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করে দু’টি বাসে করে কোকআভেন থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পঙ্কজবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে এগোচ্ছিলাম। অথচ পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। আসলে শাসক দলের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছে পুলিশ।’’ তাঁর দাবি, থানায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের শর্তাধীন জামিন দেওয়ার জন্য জোর করে পুলিশ। তাঁরা তা মানতে না চাওয়ায় ঘণ্টা তিনেক বাদে বিনা শর্তেই তাঁদের জামিন দেওয়া হয়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, “মিছিল করে এসে দোকান বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছিলেন মিছিলকারীরা। তাই মিছিল আটকানো হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় জন্য তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।’’
নিয়ামতপুরে অবরোধে সিপিএম। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুর স্টেশনে বামেদের এমন আন্দোলন অবশ্য শহরের অন্যত্র দেখা যায়নি। তবে বাম কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, তাঁদের অনেক সদস্যই হাজিরা বাতিল করে বন্ধ সমর্থন করেছেন।
বন্ধের প্রভাব পড়েনি আসানসোলেও। খোলা ছিল আসানসোল বাজার। স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস, সব জায়গাতেই কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিক ছিল বলেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে এ দিন সকালে আসানসোলে একটি মিছিল বের করে সিপিএম। শহরের সামান্য অংশ পরিক্রমা করে রবীন্দ্রভবন লাগোয়া এলাকায় কিছু ক্ষণ পিকেটিং করা হয়। কুলটির নিয়ামতপুরে এ দিন সকালে সিপিএম বাজার, দোকান বন্ধের আর্জি জানালেও তা সফল হয়নি বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। পরে সামান্য সময়ের জন্য জিটি রোড অবরোধ করেন সিপিএমর কর্মী-সমর্থকেরা।
সামগ্রিক ভাবে এ দিন বন্ধের কর্মসূচি ‘ব্যর্থ’ বলেই দাবি করেছেন তৃণমলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘বন্ধ মানুষ একেবারেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই সব স্বাভাবিক ছিল।’’