প্রতীকী ছবি
‘স্মার্টফোন’ না থাকা, থাকলেও ‘নেট-প্যাক’ কিনতে না পারা, পারিবারিক আর্থিক অবস্থা— এই তিন কারণে স্কুল পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই ‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থার বাইরে বলে দাবি বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম বর্ধমানে প্রাথমিক ও হাইস্কুল, দু’ক্ষেত্রেই গত কয়েক বছরে ‘কমে আসা’ স্কুল-ছুটের সংখ্যা এলাকা বিশেষে ফের বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংগঠনগুলির।
স্কুল ও এলাকা বিশষে কী ভাবে বদলে যাচ্ছে শিক্ষা-চিত্র, তা উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। তাদের মতে, আসানসোলের কন্যাপুর রোডের একটি হাইস্কুলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া চলছে। সেখানে ১০০ শতাংশ পড়ুয়াই ‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থার অন্তর্গত। প্রায় একই ছবি আসানসোলের দু’টি গার্লস হাইস্কুলেও।
কিন্তু কাঁকসার মলানদিঘি, অণ্ডালের কাজোড়া, উখড়া, জামুড়িয়ার প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় ছবিটা তেমন নয় বলে দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। যেমন, বারাবনি ব্লকের একটি স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, তাঁদের স্কুলে আসে মূলত প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়ারা। ভর্তির সময়ে তাদের অনেকে মোবাইল নম্বর দিয়েছিল। কিন্তু এখন সে সব নম্বরে ফোন করে দেখা যাচ্ছে সেগুলি বন্ধ বা যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাঁরা জানান, ওই সব পড়ুয়ার পরিবারে ‘স্মার্টফোন’ দূর্অস্ত, সাধারণ মোবাইলই আছে কি না সন্দেহ! এমন উল্টো ছবির কারণ, এলাকা বিশেষে অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থা বদলে যাওয়া, মনে করছেন শিক্ষকেরা।
এই পরিস্থিতিতে ওই সব স্কুলগুলির পড়ুয়াদের বড় অংশ পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে বলে আশঙ্কা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। পাশাপাশি, তাঁরা মনে করছেন, পরিবারের আর্থিক সুরাহার জন্য কাজেও যোগ দিতে পারে তারা। সে ক্ষেত্রেও স্কুলছুট ও শিশুশ্রম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’-র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ বলেন, ‘‘আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের পড়ুয়াদের নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ কেনা, নেট-প্যাক ভরানো ইত্যাদি আর্থিক কারণেই ওই সব পরিবারগুলির পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের আশঙ্কা, এর ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাবে তারা।’’ তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’-র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। গ্রামের পাশাপাশি, শহরের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের নিয়ে সব থেকে বেশি দুশ্চিন্তা। ভবিষ্যতে এমন কোনও পদক্ষেপ করতে হবে, যাতে পড়ুয়ারা ফের স্কুলমুখী হয়।’’
সমস্যার কথা জানিয়েছেন অভিভাবকেরাও। পলাশডিহার বাসিন্দা রিনা সাউয়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের একটাই টু-জি মোবাইল। ফলে, কী ভাবে ছেলের পড়াশোনা হবে জানি না।’’ আর এক অভিভাবক, পেশায় একটি সাইকেল সারাইয়ের দোকানের কর্মী কাঁকসার অশোক কিস্কু জানান, তাঁর মোবাইলই নেই।
বিষয়টি নজরে রাখা হয়েছে বলে দাবি শিক্ষা দফতরের। জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয় পাল বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে স্কুলছুটের সংখ্যা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। অনলাইন ব্যবস্থার বাইরে যারা রয়েছে, তাদের কাছে অন্য ভাবে পৌঁছনোর তোড়জোড় চলছে। এক জন পড়ুয়াও যাতে স্কুলছুট না হয়, সে জন্য এলাকা ধরে ধরে চিহ্নিত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।