চাষের ঋণ শোধের আতঙ্ক কেড়েছে প্রাণ

ভাতারে আত্মঘাতী দু’জন ঠিকা-চাষির বাড়ি ঘুরে গেল ‘সেভ ডেমোক্রেসি’ সংগঠনের প্রতিনিধিদল। ওই দুই চাষির পরিজনদের সঙ্গে কথা বলার পরে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন অভিযোগ করেন, “কৃষি-প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০২:৪৫
Share:

ভাতারে আত্মঘাতী দু’জন ঠিকা-চাষির বাড়ি ঘুরে গেল ‘সেভ ডেমোক্রেসি’ সংগঠনের প্রতিনিধিদল। ওই দুই চাষির পরিজনদের সঙ্গে কথা বলার পরে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন অভিযোগ করেন, “কৃষি-প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সমবায়গুলি মুখ থুবড়ে পড়ায় চাষিরা মহাজনদের কাছ থেকে ধার করে চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন।” মৃত দুই চাষির পরিজনদেরও দাবি, চাষ করতে গিয়ে মহাজনের কাছে ঋণ হয়ে গিয়েছিল। তার উপরে কালবৈশাখীর ঝড়-জলে জমির বেশির ভাগ বোরো ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওই ঋণ কী ভাবে শোধ করবেন, সেই আশঙ্কাতেই তাঁরা আত্মঘাতী হয়েছেন।

Advertisement

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘প্রশাসন সবসময় চাষিদের পাশে রয়েছে। যে কোনও দুর্যোগ ঘটলে কৃষিকর্তারা সরাসরি মাঠে চলে যাচ্ছেন।’’

শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ সেভ ডেমোক্রেসির সদস্যেরা প্রথমে যান কুলনগরের দিলীপ ঘোষের বাড়িতে। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দিলীপবাবুর স্ত্রী অর্চনাদেবী ও তাঁর ছেলে রণজিৎ জানান, তাঁদের কোনও কিসান ক্রেডিট কার্ড ছিল না। শস্যবিমাও নেই। দিলীপবাবু প্রায় কুড়ি বিঘা জমি ঠিকা নিয়ে চাষ করেছিলেন। তার জন্য আড়াই লক্ষ টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের ক্ষোভ, “চাষের কারণে আমাদের পরিবারের এক জনের মৃত্যু হয়েছে, সেটাও স্বীকার করতে পারছে না প্রশাসন। সেই প্রশাসন আমাদের ফসলের ক্ষতিপূরণ দেবে, বিশ্বাস করব কী করে?”

Advertisement

প্রায় একই সুরে ক্ষোভ উগরে দেন কুলনগরের পাশে কাঁটারি গ্রামের চৈতালী রায়। বোরো ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মহাজনের ঋণ কী ভাবে শোধ করবেন, সেই ভয়ে তাঁর স্বামী সম্রাট রায় আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর দাবি। এ দিন ওই সংগঠনের কাছে ৫ বছরের মেয়ে ও আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে বলেন, “আমি তো অসহায় হয়ে গেলাম। আমার বাচ্চাদের কী হবে?”

এই প্রশ্নের উত্তর কারও কাছেই ছিল না। পরে সেভ ডেমোক্রেসির সদস্যদের দাবি, তাঁরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হবেন। যথাযথ জায়গায় রিপোর্টও পাঠাবেন। সংগঠনের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, “চাষে কী কী সুবিধা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে তার সম্যক ধারণা এখানকার মানুষজনের নেই। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন করার জন্য উদ্যোগী হব।” রাজ্য কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে সাম্প্রতিক ঝড়-বৃষ্টিচে চাষে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট দফতরে জমা পড়েছে। জল নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে জেলাকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলাশাসকের কাছ থেকে রিপোর্ট আসার পর সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement