ঘটনার পুনর্নির্মাণের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
পশ্চিম বর্ধমানের রূপনারায়ণপুরের বিডিওপাড়া লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা শেফালি রায় (৬৫) খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ হল বুধবার। রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে করণ দাস নামে বৃদ্ধার পরিচারককে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাকে জেরা করে আরও কিছু তথ্য জানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০-র ২০ মার্চ বিডিওপাড়া লাগোয়া নিজের বাড়ি থেকেই শেফালি রায়ের দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে তাঁকে খুনের ঘটনার জড়িত সন্দেহে পুলিশ পরিচারক করণ দাসকে গত শনিবার গ্রেফতার করে। রবিবার ধৃতকে আসানসোল আদালতে তোলা হয়। বিচারক অভিযুক্তকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান। বুধবার অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে, খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, কী ভাবে অভিযুক্ত বৃদ্ধাকে খুন করেছিল, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অভিনয় করে দেখিয়েছে ধৃত।
তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন করণ মদ্যপ অবস্থায় সকাল ১০টা নাগাদ বাইরের গেটের তালা খুলে ঘরে ঢোকে। প্রথমে সে ডান দিকের একটি ঘর পরিষ্কার করে। পরে, ট্যাঙ্কে জল তোলার জন্য পাম্প চালায়। এর পরে বৃদ্ধার কিছু কাপড় কাচে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তার কাজ হয়ে যায়। করণ যখন কাজ করছিল, সে সময় বৃদ্ধা সিঁড়ির ঘরের বাঁ দিকের একটি ঘরে চেয়ারে বসেছিলেন। তাঁর চেয়ারের সামনে একটি টেবিলও ছিল। কাজ শেষ করে করণ শেফালির ঘরে যায়। কাজ শেষ করার কথা জানিয়ে সে বাড়ি যেতে চায়। করণের দাবি, ওই সময়ই তার সঙ্গে বৃদ্ধার কথা কাটাকাটি হয়। তখন নিজের রাগ সামলাতে না পেরে, করণ বৃদ্ধাকে পিছন দিক থেকে সজোরে সামনের দিকে ঠেলে দেয়। টাল সামলাতে না পেরে বৃদ্ধা টেবিলের উপরে ঝুঁকে পড়েন। পুলিশের দাবি, জেরায় করণ তাদের আরও জানিয়েছে, এর পরে সে পাশের ঘর থেকে একটি ওড়না নিয়ে এনে বৃদ্ধার গলায় পেঁচিয়ে জোরে টেনে ধরে। কিছু পরে, বৃদ্ধার নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাই দেখে করণ সেখানে অপেক্ষা না করে, গেটে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার দিন পড়শিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। পড়শিরা জানান, বাড়িতে বৃদ্ধা একাই থাকতেন। তাঁর ছোটভাই পেশায় আইনজীবী শেখরচন্দ্র রায় রাঁচীতে পরিবার নিয়ে করেন। দিদির অপমৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ওই দিনই দুপুরে রূপনারায়ণপুরে আসেন। তাঁর দায়ের করা অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
গত দু’বছর ধরে তদন্তের শেষে বৃদ্ধার পরিচারক করণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকেই করণ ফেরার ছিল। দিন কয়েক আগে, সে রূপনারায়ণপুরের হরিজন বস্তিতে নিজের বাড়িতে ফেরে। এর পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের দাবি, জেরায় করণ তাদের কাছে বৃদ্ধাকে খুন করার কথা স্বীকার করে। খুনের মামলা রুজু হয়।