Robbery at Ausgram

হাত-পা বেঁধে ডাকাতি, তবে ফেরত নথি

বাড়ির বাসিন্দারা তো বটেই, থানার কাছে এমন ঘটনায় আতঙ্কে প্রতিবেশীরাও। তাঁদের দাবি, অনেক বাড়িতেই বয়স্ক মানুষজন একা থাকেন। সেখানে এমন দল বেঁধে লুটপাট চালালে ঠেকানোর উপায় নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৯
Share:

লুটপাটের পরে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

দু’দিন আগে বিদেশ থেকে ফিরেছেন বড় ছেলে। শীতের রাতে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়েছিলেন আউশগ্রামের পলাশতলার ওই দোতলা বাড়ির বাসিন্দারা। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাইরের কোলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে, ভিতরের লোহার ছিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে ১২-১৫ জনের একটি দল। বাড়ির অনেকের হাত-পা বেঁধে, কারও চোখ বেঁধে আধ ঘণ্টা ধরে চলে লুটপাট। নগদ কয়েক লক্ষ টাকা, গয়না তো বটেই যাওয়ার আগে সমস্ত নথি, পরিচয়পত্র দামী জ্যাকেট, কম্বলও ডাকাতেরা নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

তবে সব নিয়ে গেলেও দয়া করে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো সরকারি নথিগুলি নেবেন না! ডাকাত দলের কাছে হাতজোড় করে এমনই আবেদন জানিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। তাণ্ডব চালানো ডাকাত দলটি তখন দু’দণ্ড থমকে দাঁড়িয়ে একটি ব্যাগ ফেলে দিয়ে যায়। পরে দেখা য়ায়, সেই ব্যাগে এক জনেরই আধার, ভোটার কার্ড, পাসপোর্টের মতো নথি রয়েছে। কেন শুধু সরকারি কার্ড এবং পাসপোর্টের জন্য হাতজোড় করেছিলেন? বাড়ির লোকজন বলছেন, বিদেশ কর্মরত বাড়ির ছেলেটি তা না হলে আর কাজের জায়গায় ফিরতে পারতেন না।

ওই বাড়ির বাসিন্দারা তো বটেই, থানার কাছে এমন ঘটনায় আতঙ্কে প্রতিবেশীরাও। তাঁদের দাবি, অনেক বাড়িতেই বয়স্ক মানুষজন একা থাকেন। সেখানে এমন দল বেঁধে লুটপাট চালালে ঠেকানোর উপায় নেই। বাধা দিলে প্রাণে মারা যেতে হতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকার পরিস্থিতিতে নজর রাখা হচ্ছে। ওই ডাকাত দলের সন্ধানও চালানো হচ্ছে।

Advertisement

ওই বাড়ির কর্তা, বছর বাষট্টির অনিলকান্তি দত্ত জানান, ২৮ বছর আগেও একবার তাঁদের বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। জমি কেনার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে এনেছিলেন তিনি। ডাকাতেরা তাঁর বছর তিনেকের ছেলে অপূর্বর গলায় ছুরি ধরে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে লুটপাল চালায় সে বার। সেই অপূর্বই এখন ইঞ্জিনিয়ার, আফ্রিকায় থাকেন। শুক্রবার সকালেই স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে নাইজিরিয়া থেকে ফিরেছেন তিনি। অপূর্ব জানান, টাকা, গয়না, বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের মতো নথিও নিয়ে যাচ্ছিল ডাকাতেরা। তা দেখে তিনি বলে ওঠেন, ‘আমার একটা অনুরোধ ছিল। যা নিচ্ছেন নিন, কিন্তু আমার পাসপোর্ট, ভিসা, ইন্টারন্যাশনাল এটিএম কার্ডগুলি দয়া করে নেবেন না। বিপদে পড়ে যাব। কর্মস্থলে ফিরতে পারব না।’ অপূর্বের দাবি, তা শুনে দু’জন ডাকাত কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকে। তার পরে একটি ব্যাগ সামনে ফেলে দেয়। যাওয়ার সময়ে বলে, ‘যা চেয়েছিস, এতে পেয়ে যাবি।’ পরিবারটির দাবি, ওই ব্যাগেই অপূর্বের নথিপত্র ছিল। কিন্তু বাড়ির অন্যদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি ভর্তি ব্যাগটি ডাকাতেরা নিয়ে গিয়েছে। তাতে দু’টি মোটরবাইকের ‘ব্লু-বুক’ও ছিল। বাড়ির এক মহিলার আর্জিতে সেগুলিও ফেলে রেখে যায় ডাকাতেরা। অপূর্ব বলেন, ‘‘এক সঙ্গে যেন ডাকাতদের দুই রূপ দেখলাম!’’

পরিবারের দাবি, সাড়ে ১২টা নাগাদ ১২-১৫ জনের একটি ডাকাত দল বাড়ির বাইরের কোলাপসিপল গেটের তালা ভেঙে, ভিতরে থাকা একটি লোহার দরজার ছিটকিনি খুলে প্রথমে অনিলবাবুর ঘরে ঢোকে। বাড়িতে অনিলবাবুর ছোট ছেলে, বৌমা ও তাঁদের চার মাসের মেয়েও ছিল। গৃহকর্তা বলেন, “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার বুকের উপরে তিন জন উঠে বসে হাত, পা, মুখ বেঁধে আমাকে পুরোটাই লেপ দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়। আমার গোঙানির আওয়াজ পেয়ে পাশের ঘরে শুয়ে থাকা আমার বড় ছেলে বেরিয়ে এলে দু’তিন জন বড় হাঁসুয়া, রামদা গলায় ধরে তাকেও পিছমোড়া করে হাত, পা, চোখ বেঁধে ফেলে।’’ সারা বাড়ি তোলপাড় চালায় দলটি। পরিবারের দাবি, প্রত্যেক ঘরে দু’-তিন জন করে হাঁসুয়া, রামদা নিয়ে পাহারা দিচ্ছিল। প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে গয়না খুলে দিতে বলে। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা না গেলেও মুখে গুলি করে দেওয়ার কথা বলছিল ডাকাতেরা। ভয়ে সকলেই গয়না খুলে দেন।

পরে ডাকাতেরা নিজেরাই আলমারির তালা ভেঙে ভিতরে থাকা টাকা, কয়েক’শো বিদেশি মুদ্রা, কয়েক ভরি সোনা ও রুপোর গয়না লুটপাট চালায়। ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যে লুটপাট চালিয়ে হেঁটে বাড়ির উত্তর দিকের মাঠ দিয়ে পালায় তারা। অপূর্ব জানান, গোলমাল বুঝেই পাশের বাড়ির এক বন্ধুকে ফোন করেছিলেন তিনি। সেই যুবক এলে তেড়ে যায় কয়েক জন দুষ্কৃতী।

রাতের কথা বলতে গিয়ে সোমবারও ভয়ে কাঁপছেন চম্পা, স্বাতীরা। তাঁরা বলেন, হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি পরেছিল ডাকাতেরা। প্রত্যেকের মুখ টুপি নয়তো মাফলারে ঢাকা ছিল। বয়স ২২ থেজে ৩২ বছরের মধ্যে। বাংলাতেই কথা বলছিল তারা। তাদের মধ্যে এক জনের কথায় হিন্দি টান ছিল। তাঁর বয়স একটু বেশি। ৪০ বছরের মধ্যে। অনিলবাবুর বৌমারা বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় মুখে বিশেষ ধরনের আওয়াজ করছিল ওরা।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ডাকাত দলটি অনেক আগে থেকেই বাড়ির উত্তর দিকে ফাঁকা মাঠে অপেক্ষা করছিল। বিজেপির আউশগ্রাম বিধানসভার আহ্বায়ক চদ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষ ভীত, আতঙ্কিত। থানার অদূরে যে ভাবে ডাকাতি হল, তাতে এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।’’

পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীদের মধ্যে সম্ভবত অনিল ও অপূর্বের পরিচিত কেউ ছিল। তাই শুধু তাঁদের হাত-পা বেঁধেছিল। আর সে কারণেই অপূর্বের অসুবিধাও উপলব্ধি করতে পেরেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement