দুর্গাপুরের জেমুয়া গ্রামের বেহাল নলকূপ। ছবি: বিকাশ মশান
আবার একটা পঞ্চায়েত ভোট এসে গেল। কিন্তু উন্নয়নের অনেক কিছুই অধরা রয়ে গেল, এমনটাই বক্তব্য দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের।
এই পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের সবগুলি তৃণমূলের দখলে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সাধ্যমতো উন্নয়ন করা হয়েছে এলাকার।
দুর্গাপুর শহরের সীমানা লাগোয়া জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত। শহরের সঙ্গে এতটাই এই পঞ্চায়েত মিশে রয়েছে যে, এর বেশ কিছুটা অংশ আলাদা করে চেনা যায় না। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এবং বিরোধীদের অভিযোগ, রাস্তা, নিকাশি, পানীয় জল-সহ সব রকম নাগরিক পরিষেবা বেহাল। যদিও পঞ্চায়েতের দাবি, বাজেটের ৩৫ শতাংশ রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণে, ৩০ শতাংশ নিকাশি ব্যবস্থায়, ২৫ শতাংশ পানীয় জলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বিদায়ী প্রধান মল্লিকা লোহার জানান, পানীয় জলের জন্য সৌরবিদ্যুৎ চালিত ১৪টি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানীয় জলের বিস্তর সমস্যা রয়েছে। রাস্তাও বেহাল।
জেমুয়া গ্রামে দেখা গেল, পথবাতি নেই। ডাঙাপাড়ায় নলকূপ বেহাল। কুয়োয় লম্বা দড়ি ফেলে নীচ থেকে জল তুলছেন মহিলারা। নিকাশি নালার কাজ অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে আছে। কেউ কেউ আবার অভিযোগ করছেন, আবাস যোজনায় দুর্নীতি হয়েছে। তাঁদের মাটির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। অথচ, প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ার পরেও, আবাস যোজনায় নাম ওঠেনি বলে অভিযোগ।
আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একাধিকবার এই পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। যদিও দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে পঞ্চায়েতের দাবি, প্রাথমিক তালিকায় ২৫১ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় ১০৫ জনের নাম অনুমোদিত হয়েছে।
স্থানীয় সিপিএম নেতা শেখ রবিউল ইসলামের অভিযোগ, এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাম সমর্থক। তাই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। তাঁর দাবি, “শাসক দল বার বার হুমকি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ মাথা নত করেননি। তাই পরিষেবার এই হাল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, ‘‘জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যেটুকু যা উন্নয়ন হয়েছিল, তা বাম আমলে। তৃণমূলের বোর্ড ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুধু দুর্নীতি হয়েছে।” আবার বিজেপি জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘কাটমানি আর তোলাবাজি ছাড়া এই পঞ্চায়েতে গত পাঁচ বছরে কিছুই করেনি।’’
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি নেই তাই এমন ভিত্তিহীন কথা বলছে।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘বিরোধীদের বলার কিছু নেই। তাই এ সব বলছে। মানুষ জানেন, এক মাত্র আমরাই সব সময় তাঁদের পাশে আছি।’’