বন্ধ: দামোদরের পাড়ে এই বাংলোটি নিয়েই অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
প্রায় দেড় দশক আগে দামোদরের ধারে দুর্গাপুরে পর্যটন দফতরের বাংলোয় সপরিবার নিভৃতে কয়েক দিন কাটিয়ে গিয়েছেন হাওড়ার দেবাশিস আচার্য। প্রবীণ দেবাশিসবাবু সম্প্রতি আরও এক বার ওই বাংলোয় কয়েক দিন কাটাবেন বলে ভেবে খোঁজ নিয়ে জানলেন, তাতে এখন তালা ঝুলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরখানেক আগে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব দুর্গাপুরে এসে বাংলো সংস্কার করে চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। কিম্তু কাজ হয়নি।
দুর্গাপুরের বীরভানপুরে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম ‘রিভিয়েরা’ নামের বাংলোটি তৈরি করে সত্তরের দশকে। দোতলা এই বাড়িটিতে দু’জন, তিন জন, চার জনের থাকার মতো ঘর রয়েছে। ছিল, পর্যটকদের যাবতীয় সুযোগসুবিধার জন্য পরিকাঠামোও। প্রথম দিকে পর্যটন দফতর বাংলোটি নিজেরাই চালাত। কিন্তু পরে তা ‘লিজ’ দেওয়া হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন হোটেলের তুলনায় ভাড়া কম ছিল এই বাংলোর। তাই শুধু পর্যটকরা নন, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থাওকর্মী সম্মেলন-সহ নানা অনুষ্ঠানে ওই বাংলো ব্যবহার করত।
কিন্তু দুর্গাপুর স্টেশন থেকে সামান্য দূরে দামোদরের ধারে প্রকৃতির মাঝে চালু বাংলোটি বছর দশেক আগে থেকে ধুঁকতে শুরু করে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বাড়িটি জৌলুস হারায়। সিটি সেন্টার-সহ নানা জায়গায় নতুন নতুন হোটেল গড়ে ওঠে। জাতীয় সড়কের ধারে গাঁধী মোড়ে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের অন্য একটি থাকা-খাওয়ার জায়গা সাজানোর কাজ শুরু হয়। ফলে কদর কমতে থাকে রিভিয়েরার। কয়েক বছর আগে তা পাকাপাকি বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বাংলো চত্বর ভরে গিয়েছে আগাছায়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রাত হলেই বসছে অসামাজিক কাজকর্মের আসর। ২০০৪-এ বেসরকারি সংস্থার কর্মী হিসেবে বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে ওই বাংলোয় গিয়েছিলেন ডিএসপি টাউনশিপের বি-জোনের বাসিন্দা উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দারুণ পরিবেশ। সঙ্গে জিভে জল আসা নানা পদ দিয়ে দুপুরের আহার হয়েছিল।’’ হাওড়ার দেবাশিসবাবুরও আক্ষেপ, ‘‘বাংলোটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে শুনে খারাপ লেগেছে। প্রকৃতির মাঝে এমন থাকায় জায়গা দুর্গাপুরে আর একটাও নেই।’’
আটের দশকের শুরুতে দুর্গাপুরে প্রশাসনিক আধিকারিক হিসেবে আসেন দিলীপ অগস্তি। বাংলো দেখভালের জন্য গড়ে তোলা কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দিলীপবাবু বর্তমানে দুর্গাপুরের মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলোটি চালু হলে পর্যটকদের সুবিধার পাশাপাশি সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে।’’ বাংলোটি নতুন করে চালু করার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় মহকুমা প্রশাসন।