ফাইল চিত্র।
রাজনীতি ‘ছাড়বেন’ বাবুল, ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া বছর সাতেক আগে আসানসোলে নির্বাচনী জনসভা থেকে খোদ নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, সংসদে তিনি বাবুল সুপ্রিয়কে চান। আসানসোলবাসীর ভোটে সে বার (২০১৪-য়) এবং ২০১৯-এ সংসদে যান বাবুল। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও হন। এর পরে শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন বাবুল। এলাকার সাংসদের এই ‘পোস্ট’ সামনে আসতেই, তাঁর সংসদ ক্ষেত্র, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সামনে এসেছে।
আসানসোলের মহিশীলা। এখানেই একটি আবাসনে বাবুলের অস্থায়ী বাড়ি। বাবুলের পোস্টের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সেখানে স্থানীয়দের জটলা দেখা যায়। উপস্থিত লোকজনের অনেককেই দেখা যায়, মোবাইলে সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে কেউই সফল হননি। তবে বাবুল ওই পোস্টেই লেখেন, ‘‘...আসানসোলের মানুষকে অসীম কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা জানিয়ে আমিই সরে যাচ্ছি।’’
এ দিকে, ওই বাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা নীলাদ্রি দাস রায় বলেন, ‘‘খুবই বেদনাদায়ক সিদ্ধান্ত। আসলে বাবুলের মতো সংবেদনশীল মানুষের জন্য রাজনীতি নয়। উনি থাকুন, তাহলে আসানসোলের উপকার হবে।’’ তবে বিষয়টিকে একেবারেই ‘রণে ভঙ্গ’ দেওয়া হিসেবেই দেখছেন সাহিত্যিক এবং একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আসানসোলের নাগরিকেরা তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য সাংসদ নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু কেন তিনি সেই দায়িত্ব অস্বীকার করে মাঝ পথে
চলে যাচ্ছেন?’’
কেন এই ‘সিদ্ধান্ত’, তা নিয়ে নানা জল্পনাও তৈরি হয়েছে নাগরিকদের মধ্যে। এ দিকে, এই পোস্টের সঙ্গে বাবুলের ‘শিল্পী-সত্তার’ যোগাযোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন শহরের সঙ্গীত শিল্পী সুজিত লায়েক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘উনি শিল্পী। শিল্পীরা অপমান সহ্য করতে পারেন না। উনি কি কোথাও অপমানিত হয়েছিলেন?’’ আবার শহরের চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত মনে করছেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সাংসদ হয়তো খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না।
এ দিকে, এই মুহূর্তে সাংসদ হিসেবে তাঁর কাজকর্মের কথাও মনে করছেন কেউ-কেউ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার প্রেমাংশু মণ্ডল মনে করেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয়ের সাংসদ-কালে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি, কুমারপুরে উড়ালপুল তৈরি।’’
পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলেও। বিজেপি জেলা অহ্বায়ক শিবরাম বর্মন বলেন, ‘‘দলের কাছে এ বিষয়ে কোনও খবর নেই।’’ তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক অভিজিৎ ঘটকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা ওঁর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’’ তবে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে, বাবুলের প্রতিদ্বন্দ্বী তথা সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি ‘না আঁচানো’ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে রাজি নন। তাঁর সংযোজন: ‘‘হয়তো দেখা গেল, পদত্যাগপত্র জমা দিতে গিয়ে উনি হয়তো মন্ত্রিত্বের শপথ নিয়ে ফেললেন!’’ যদিও, একদা আসানসোলের রাজনীতিতে বাবুলের ‘বিরুদ্ধ পক্ষ’ বলে পরিচিত বর্তমানে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিষয়টি ‘‘আসানসোলের জন্য ভাল খবর নয়’’, এমন মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি, তাঁর আর্জি, ‘‘আমি মনে-প্রাণে চাইব, উনি যেন সাংসদ পদ এবং রাজনীতি না ছাড়েন।’’