প্রতীকী ছবি।
লোকাল ট্রেন চালু হলেও হকারদের ওঠা মানা। এমনকি, প্ল্যাটফর্মেও তাঁদের ঠাঁই হয়নি। হকারদের বড় অংশের দাবি, ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মে বিক্রিবাটার উপরেই তাঁরা নির্ভরশীল। বিষয়টি ‘মানবিক’ দৃষ্টিতে দেখার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
বুধবার দুপুরে বর্ধমান স্টেশনের মূল গেটের সামনে হকারদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় আইএনটিটিইউসি। হকারদের দাবি, সাত মাসের বেশি সময় ট্রেন না চলায় তাঁদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। তাই তাঁদের জিনিস বিক্রির সুযোগ দিতে হবে। স্টেশন চত্বরে টোটো-রিকশাও ঢুকতে দেওয়া হয়নি এ দিন। সেগুলিকে স্টেশন চত্বরে ঢুকতে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন আইএনটিটিইউসি এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
বর্ধমান স্টেশনের উপরে প্রায় চারশো হকার নির্ভরশীল। জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক খোকন দাসের দাবি, ‘‘স্টেশনে ৩৫-৪০ বছর ধরে জিনিস ফেরি বা স্টল করে বিক্রি করছেন অনেকে। তাঁদের ফের সুযোগ দেওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।’’ আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদের কথায়, ‘‘মানুষের সমস্যার কথা ভেবেই রেলের কাছে ধীরে-ধীরে হকারদের এবং টোটো-রিকশা ঢুকতে দেওয়ার দাবি করেছি।’’
মেমারির হকার মন্টু রায়ের দাবি, ‘‘এত দিন ট্রেন চলেনি। মুটের কাজ করে সংসার চালিয়েছি। ট্রেন চলছে, অথচ হকারদের ওঠা নিষেধ— এ কেমন নিয়ম!’’ শক্তিগড়ের হকার শ্যামল দাসের কথায়, ‘‘সরকারের আমাদের কথাও ভাবা উচিত।’’ বর্ধমান-কাটোয়া লাইনের হকার গণেশ হাজরা, বর্ধমান স্টেশনের মকবুল শেখদের ক্ষোভ, ‘‘যাত্রীদের কথা ভেবে না কি আমাদের ট্রেনে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না! আমাদের পেট চলবে কী ভাবে?’’ সিপিএমের শ্রমিক নেতা সুকান্ত কোনারেরও বক্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য-বিধি মেনে হকারেরা যাতে ট্রেনে উঠতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা দরকার। রেল ও রাজ্যকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে হবে। এ নিয়ে আমরা কাটোয়া, কালনা-সহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করছি।’’
যদিও হাওড়া-কাটোয়া, বর্ধমান-হাওড়া লাইনের যাত্রীদের একাংশের দাবি, বেলার দিকে মাঝপথে ট্রেনে মাস্ক, চা ও পাঁপড় বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে কিছু হকারকে। রেলের দাবি, দু’-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এখন ট্রেনে বা প্ল্যাটফর্মে হকার ‘নিষিদ্ধ’। পূর্ব রেলের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ট্রেনে আপাতত হকারদের উঠতে দেওয়া হবে না। এমনকি, প্ল্যাটফর্মের দোকানও খুলতে দেওয়া হবে না। রাজ্য বা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পরে কী পদক্ষেপ করা যায়, তা বলা যাবে। তবে রেলের অনুমোদিত বিক্রেতারা ছাড়া, সব হকারই ‘অবৈধ’।’’
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, দূরত্ব-বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মে কোনও দোকান বাধা হয়ে দাঁড়ালে তা সরাতে বলতে পারেন রেলের নিরাপত্তাকর্মীরা। এ দিন প্ল্যাটফর্ম বা স্টেশন লাগোয়া সব দোকানই বন্ধ ছিল। হকারদের বড় অংশের ক্ষোভ থাকলেও অন্য সুরও শোনা গিয়েছে। কাটোয়ার হকার দিলীপ কলের কথায়, ‘‘বাদাম বিক্রি করি। অনুমতি পেলেও ভিড়ের পরিস্থিতি দেখে ট্রেনে ওঠার ঝুঁকি নেব। মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে রাখব।’’