রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বাইশ বছরের মাঝে আড়াই বছরের বিরতি। কাটোয়া পুরসভার রাশ ফের যেতে চলেছে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। আজ, সোমবার তাঁকে সামনে রেখেই কাটোয়ায় তৃণমূলের নতুন বোর্ড গড়ার সম্ভাবনা।
১৯৯৫ সালে বামফ্রন্টকে হারিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবুর নেতৃত্বে কাটোয়া পুরসভায় ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। ২০১০ সালে শুভ্রা রায় পুরপ্রধান হলেও পুরসভা পরিচালনায় বড় ভূমিকা ছিল রবীন্দ্রনাথবাবুরই। ২০১৫ সালের পুরভোটে কাটোয়ার ২০টি আসনের মধ্যে অমর রামের নেতৃত্বে তৃণমূল ও রবীন্দ্রনাথবাবুর নেতৃত্বে কংগ্রেস, দু’পক্ষই ১০টি করে আসন দখল করে। কংগ্রেস সরে দাঁড়ানোয় বোর্ড গড়ে তৃণমূল। অমরবাবু পুরপ্রধান হন। সে বছর অক্টোবরে কংগ্রেস থেকে রবীন্দ্রনাথবাবু-সহ কংগ্রেসের সব কাউন্সিলরই তৃণমূলে যোগ দেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, এর পরেই শহরে তৃণমূলের অন্দরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিধানসভা ভোটেও তার প্রভাব পড়ে। কাটোয়া শহরে রবীন্দ্রনাথবাবু প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে গ্রামীণ এলাকার ভোটের দৌলতে কোনওমতে জিতে যান। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটের ফল খারাপ হওয়ার পিছনে কোন্দলের পাশাপাশি শহর এলাকায় পুর-পরিষেবা নিয়ে মানুষের অসন্তোষের কথাও উঠে আসে দলের পর্যালোচনায়। সে কারণেই গত নভেম্বর থেকে অমরবাবুকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, গত বছর নভেম্বর থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কখনও ফোন করে, কখনও তৃণমূল ভবনে ডেকে পাঠিয়ে অমরবাবুকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তা না মানায় ২৪ অগস্ট দলের রাজ্য নেতৃত্ব পুরপ্রধানকে বাদ দিয়েই তৃণমূল ভবনে বৈঠক করেন। সেখানে দলের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য পুরপ্রধানকে সরানো হবে। শাসকদলের একটি সূত্রের দাবি, পুরসভার দায়িত্ব বিধায়ক তথা কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথবাবুকেই দেওয়ার জন্য শীর্ষ নেতৃত্ব ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় নির্দেশ মেনে প্রথমে পুরপ্রধানের অপসারণ চেয়ে ১৪ জন কাউন্সিলর চিঠি দেন। নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে গেলেও পুরপ্রধান বৈঠক না ডাকায় তিন কাউন্সিলর তলবি সভা ডেকে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। সেই চিঠি পাঠানো হয় জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবকে। তা পাওয়ার পরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর তলবি সভার সভাপতি তথা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদীপ্তময় ঘোষকে অস্থায়ী পুরপ্রধান পদে নিয়োগ করে। অস্থায়ী পুরপ্রধানের চিঠিতেই আজ, সোমবার পুরপ্রধান নির্বাচন হওয়ার কথা। এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবুকেই পুরপ্রধান হওয়ার বার্তা পাঠানো হয়েছে।” রবিবার রাতে রবীন্দ্রনাথবাবু ১৪ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠকও করেন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “যা হচ্ছে তা দলের নির্দেশ মেনেই।” রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “আমরা দলের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।” অমরবাবুর সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুর বলেন, “আমরা কিন্তু দলের বাইরে নই।”