— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এ বছর সেপ্টেম্বরেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পানাগড় থেকে পালসিট পর্যন্ত ছ’লেন তৈরির কাজ শেষ করার কথা। বিধানসভা ভোটের সময় থেকে ধাপে ধাপে নানা জায়গায় স্থানীয় মানুষজন ও প্রশাসনের দাবি মিটিয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। তার পরেও অন্তত সাতটি জায়গায় স্থানীয় বা প্রশাসনের দাবির সঙ্গে এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ একমত হতে পারছেন না। সাতটি জায়গায় কিছু জমির সমস্যা রয়েছে। সবমিলিয়ে ওই প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে কলকাতা থেকে দুর্গাপুর যাতায়াতের ঝক্কি এখনই কাটছে না।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প-অধিকর্তা মণীশ কুমার বলেন, “কাজ আটকে যাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে রাস্তা শেষ হতে আরও ৬-৮ মাস বেশি সময় লাগবে মনে হচ্ছে। তাতে প্রকল্পের খরচ আরও ৮০ কোটি টাকা বেশি হতে পারে।’’ প্রশাসনের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে অনেক দাবি মেটানো হয়েছে। বাকি সমস্যা সমাধানেও আলোচনার উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প শুরুর সময় থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনে কী কী কাজ করা দরকার তার তালিকা তৈরি হয়েছিল। পানাগড় থেকে পালসিট পর্যন্ত ৬৭.৫ কিলোমিটার রাস্তায় ৩২টির কাছাকাছি উড়ালপুল, আন্ডারপাস তৈরির তালিকা হয়। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শন করে আরও ১৬টি আন্ডারপাস তৈরি করা হয়। কিন্তু ‘জট’ পাকিয়েছে গলসির পুরষা, ভাসাপুল, মথুরাপুর, বর্ধমানের তেজগঞ্জ ও শক্তিগড়ের আমড়া। ওই সব গ্রামের নির্দিষ্ট জায়গায় বড় আন্ডারপাসের (পিইউপি) দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু সব দাবি মানতে নারাজ এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার খেদ, “তেজগঞ্জ-সহ কয়েকটি দাবি যৌথ পরিদর্শনের সময় মানা হবে বলে এনএইচআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন। লোকসভা ভোটের সময় কমিশনের নির্দেশে জেলার আধিকারিকেরা বদলি হয়েছেন। সে সুযোগে এনএইচআই কর্তৃপক্ষ কথা রাখতে চাইছেন না।”
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পরে পানাগড় থেকে পালশিট পর্যন্ত ১৩টি জায়গায় নতুন করে নির্মাণ কাজ সংক্রান্ত দাবি উঠেছিল। সমীক্ষার পরে ১০টি জায়গায় সম্মতি জানিয়ে প্রশাসনকে চিঠি দেয় এনএইচএআই। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রশাসন ও সড়ক কর্তৃপক্ষ যৌথ পরিদর্শন করে সেই দাবি মেনে তেজগঞ্জ-সহ অন্তত তিনটি জায়গায় বড় আন্ডারপাস তৈরির আশ্বাস দেয়। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একটি বৈঠকে ওই সব জায়গা-সহ পাঁচটি গ্রামে স্থানীয়রা কাজ আটকে দিয়েছেন বলে সড়ক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানিয়েছেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গলসির পুরষাতে একাধিক আন্ডারপাস তৈরি হচ্ছে। পুরষা হাইস্কুলের সামনেও আন্ডারপাসের দাবি করে কাজ আটকানো হয়েছে। গলসির ভাসাপুল গ্রামেও আন্ডারপাসের দাবিতে গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ আটকে রয়েছে। সেখানে সুরক্ষাজনিত কারণে আন্ডারপাস করা সম্ভব নয় বলে সড়ক কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছে।
বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জের কাছে একটি চালকলের সামনে আন্ডারপাস করেছে সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাদের স্বার্থে ওই আন্ডারপাস তৈরি হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁরা চান, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে যে তেজগঞ্জ চৌমাথা দিয়ে তাঁরা যাতায়াত করেন, সেখানে আন্ডারপাস হোক। গত কয়েক বছরে ওই এলাকায় প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের দাবি, সমীক্ষা ও যৌথ পরিদর্শনের পরে প্রথমে ‘ফুট ওভারব্রিজ’ করার কথা হয়েছিল, পরে স্থানীয়দের দাবি মেনে ছোট গাড়ি যাতায়াতের জন্য আন্ডারপাস তৈরির (এসভিইউপি) কথা হয়। কিন্তু প্রশাসনের বৈঠকে সড়ক কর্তৃপক্ষ সেই দাবি মানতে গড়িমসি করায় কর্তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যদিও সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছরের মার্চে ১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তার অনুমোদন এখনও মেলেনি। একই ছবি শক্তিগড়ের আমড়া সাঁকো ভাঙা মোড়েও। এখানেও ফুট ওভারব্রিজের বদলে অতিরিক্ত ‘এসভিইউপি’র দাবিতে স্থানীয়রা অনড় থাকায় কাজ আটকে রয়েছে। এখানেও ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হলেও অনুমোদন মেলেনি।