পোস্টার সাঁটাচ্ছে নওদাপাড়ার ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বজোড়া উষ্ণায়নের সঙ্গে যুঝতে ওরা ভরসা রাখে ছবি, বিজ্ঞানের মডেল আর আলোচনাসভায়। তবে এখানেই থেমে থাকতে নারাজ কাটোয়ার নওদাপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল। তাই ঠিক হয়েছে, উষ্ণায়নের বিপদ আর বিজ্ঞান সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা গৃহস্থ বাড়ির হেঁশেল থেকে ভিন গাঁয়ের পাড়া— সব জায়গাতেই পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রচারে নামবে স্কুলের পড়ুয়ারাই।
বৃহস্পতিবার, বিশ্ব বিজ্ঞান দিবস উপলক্ষে কাটোয়ার ওই স্কুলে হয়ে গেল বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সকাল থেকেই পড়ুয়াদের রঙ-তুলিতে ফুটে ওঠে উষ্ণায়নের ক্ষতিকারক দিকগুলির ছবি। ক্লাসঘরগুলোও হয়ে ওঠে সচেতনতার প্রচারক্ষেত্র। বাহারি রঙের বিভিন্ন পোস্টারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভেজাল খাদ্যের জেরে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিপদের কথা। সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি পেরিস্কোপ, মোটরচালিত পাখা, এলইডি ল্যাম্প-সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন মডেলের প্রদর্শনীও করে পড়ুয়ারা।
মঞ্চের আশেপাশেও বেশ ভিড় দেখা গেল। প্রজেক্টরের মাধ্যমে স্কুলেরই মাস্টারমশাই সতীনাথ রায় একের পর এক স্লাইডে দেখান কী ভাবে উষ্ণায়নের জেরে প্রাকৃতিক সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। বন্যা, খরা, চাষাবাদ সবেতেই উষ্ণায়ন কী ভাবে থাবা বসাচ্ছে, তাও উঠে আসে আলোচনায়। বেশ কয়েকজন শিক্ষকের জটলায় উঠে এল সম্প্রতি প্যারিসে শেষ হওয়া বিশ্ব আবহাওয়া সম্মেলনের কথাও। সেখানে নাকি বলা হয়েছে, আগামী নব্বই বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে প্রায় ২.৭ ডিগ্রি সেলিসায়স। শিক্ষক নিশিকান্ত চক্রবর্তী খাবারে ভেজালের বিষয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করেন। ইউরিয়া, ফরমালিন প্রভৃতি রাসায়নিকের বেশি ব্যবহারে স্বাস্থ্যে বিপদ বাড়ছে বলে আলোচনাসভার বক্তারা জানান। নিশিকান্তবাবুর দাবি, ‘‘এই সমস্ত রাসায়নিকের বেশি ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মেরও ক্ষতি হচ্ছে।’’ বক্তব্য রাখেন কাটোয়া কলেজের শিক্ষিকা তপতী ভট্টাচার্য, কাটোয়া পূর্ব চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক জানবাস শেখ প্রমুখ। প্রত্যেক বক্তাই এলাকা ও বাড়িতে বিজ্ঞান সচেতনতা বাড়াতে পড়ুয়াদের সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান। সকলেই এলাকায় সবুজায়ন বাড়ানোর জন্য সওয়াল করেন।
পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড়ও ছিল নজরে পড়ার মতো। প্রতিমা মণ্ডল, মিঠু হাজরাদের মতো বেশ কয়েকজন অভিভাবকের বক্তব্য, ‘‘এ বার থেকে বাড়িতে হাঁড়ি চাপানোর সময় ভাবতে হবে, কী রান্না করছি।’’ স্কুলের প্রধান সিক্ষক শুভাশিস রায় জানান, এ দিন বিজ্ঞানের ৫টি বিভিন্ন বিভাগে প্রশ্নোত্তর, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ও পোস্টার প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। স্কুলের তরফে জানানো গিয়েছে, দিন কয়েকের মধ্যেই বিভিন্ন গ্রামে প্রচার অভিযান চালাবে স্কুল পড়ুয়ারা। সন্দীপ, ভোলানাথ, সুদীপ্তদের মতো বেশ কয়েকজন পড়ুয়ারা জানায়, সপ্তাহে অন্তত এক দিন স্কুল শুরুর আগে বা ছুটির পর পোস্টার হাতে তারা গ্রামে গ্রামে সচেতনতা প্রচার চালাবে।