মন্দিরে ভক্তেরা। নিজস্ব চিত্র।
করোনার সংক্রমণ শিথিল হওয়ায় দু’বছর পরে এ বার মহা সমারোহে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কয়রাপুরে শুরু হয়েছে ত্রৈলোক্যতারিণীর বার্ষিক পুজো। এই উপলক্ষে বসছে মেলা, আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
বেশ কয়েক শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম পরিচয়। কয়রাপুর ও আমবোনার হিন্দু ও সংখ্যালঘুরা এই পুজোকে ঘিরে সমান ভাবে মেতে ওঠেন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই পুজো আজ, রবিবার দেবীর গ্রাম প্রদক্ষিণের মধ্যে শেষ হবে।
এলাকাবাসী জানান, অষ্টভুজা মহিষমর্দিনী সিংহবাহিনী মূর্তির বিশেষত্ব হল, দেবীর পদতলে খোদিত আছে এক কুম্ভকার দম্পতির মূর্তি। জনশ্রুতি, এক সময়ে বর্গি হানার সময়ে এই কুম্ভকার দম্পতি বিগ্রহ রক্ষা করেছিলেন। বর্ধমান-বোলপুর ২বি জাতীয় সড়কের ধারে, দেবীর প্রায় ৫০ ফুট উঁচু রেখ দেউল বিশিষ্ট মন্দিরও অন্যতম আকর্ষণীয়।
পুজোর শেষ দিন রীতি মেনে বিগ্রহকে চৌদোলায় চাপিয়ে গ্রাম ঘোরানো হয়। তখন বিভিন্ন পরিবার পুজো দেন। কয়রাপুরের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের ভিটেতে দেবীর পুজো হয়। ওই পরিবারের বংশধর শেখ নজরুল বলেন, “দেবীর পুজোর জন্য তিন দিন ধরে পরিবারের সবাই নিরামিষ খাই। পুজোর দিন সবাই সারাদিন উপবাস করে থাকি। দেবীকে আমাদের ভিটেতে নিয়ে আসা হলে, আমরা পুজো দিই।”
পুজো কমিটির তরফে ষষ্ঠীচরণ হুই, সেবাইত জগবন্ধু মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “এই সম্প্রীতির ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। বংশ পরম্পরায় ওই মুসলিম পরিবার থেকে দেবীর মন্দিরে বিশেষ নৈবেদ্য দেওয়া হয় এবং গ্রাম পরিক্রমার সময় তাঁদের ভিটেতে দেবীর পুজো হয়। ওই শোভাযাত্রায় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই যোগ দেন এবং আবির নিয়ে খেলেন। দেবীর মূল মন্দিরেও হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমরা পুজো দেন।’’