আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক দিবসের দিন মিছিলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে। ছবি: বিকাশ মশান
উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা পর্যন্ত স্বাস্থ্য প্রশাসনের অন্দরে যাঁদের ঘিরে দুর্নীতির বাসা তৈরি হয়েছিল, একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সেই বর্ধমান মেডিক্যালের প্রাক্তন আরএমও, এসএসকেএমের পিজিটি অভীক দে-কে সাসপেন্ড করল স্বাস্থ্য দফতর। সাসপেন্ড হয়েছেন অভীক দে-র ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিরূপাক্ষ বিশ্বাসও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুটি নির্দেশিকা জারি হয়েছে। বুধবারই বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন বিরূপাক্ষ।
বর্ধমানে আরএমও হয়ে আসার পরে অভীকের হাত ধরে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রশ্রয়ে তৈরি হয় ‘বর্ধমান শাখা’। রাজ্যের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ ‘বর্ধমান শাখা’ নিয়ন্ত্রণ করত বলে অভিযোগ। কয়েক দিন আগে, অভীককে টিএমসিপি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, “ওই দু’জনের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ এসেছে। সেগুলির তদন্তের পরে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছে। অভীকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যকলাপ শুরু হয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, অভীকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে প্রভাব খাটিয়ে পরীক্ষা-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসকদের পোস্টিংয়ে হস্তক্ষেপ, চিকিৎসক-পড়ুয়াদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর তাঁর ‘সঙ্গী’ হিসেবে, বর্ধমান মেডিক্যালের প্যাথলজিস্ট (সিনিয়র আরএমও) সরাসরি চিকিৎসক-পড়ুয়াদের শাসানি দিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁর শাসানির একাধিক অডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে (আনন্দবাজার যার সত্যতা যাচাই করেনি)। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ না মেনে বদলি সিদ্ধান্তকে অমান্য করার মতো অভিযোগ রয়েছে।
আন্দোলনকারীরা স্বাস্থ্য-প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে খুশি। তাঁরা জানিয়েছেন, সোমবারই কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে অভীক আর বিরূপাক্ষের নামে নির্দিষ্ট করে অভিযোগ করা হয়েছিল। এক দিকে আর জি করের তরুণী চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের বিচার, আর এক দিকে, ‘শাসানি-সংস্কৃতি’ বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অভীকের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বাস্থ্য দফতরে ই-মেল করে জানিয়েছিল।
এ দিন আন্দোলনকারীরা বলেন, “বিলম্বিত বোধোদয়। তবুও আমরা এই সিদ্ধান্তে খুশি। কারণ আমরা যে ভয়ের সংস্কৃতি বন্ধ ও দুর্নীতি রোধের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। সেটা শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য প্রশাসন মানতে বাধ্য হল।”