কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। — ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে, পুলিশের সহযোগিতায় নিজের কার্যালয়ে ঢুকতে পেরেছেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। প্রশাসনিক ভবন থেকে ৫০ মিটার দূরত্ব রক্ষা করে অবস্থান করছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে এ বার এক ধাপ এগিয়ে আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবিপূরণ চেয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ‘সম্পূর্ণ অসহযোগিতার’ ডাক দিয়েছেন। যদিও তিনি এ নিয়ে বিন্দুমাত্রও বিচলিত নন বলে দাবি করেছেন সাধন।
গত ১৪ মার্চ থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে, তাঁর পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিকদের বড় অংশই। সম্প্রতি ‘যৌথ কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি বিবৃতিতে ‘সম্পূর্ণ অসহযোগিতার’ ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাতে সই রয়েছে ১৫৯ জন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিকদের। ৯ মে পর্যন্ত এই অসহযোগিতা করা হবে বলে সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা শিক্ষক সজল ভট্টাচার্যও। ওয়েবকুপার জেলা সম্পাদক বীরু রজকও বলেন, “আমরা কোনও অবস্থাতেই পিছু হটছি না। এই উপাচার্যের অপসারণ চাই।”
তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি বিচলিত নন বলে দাবি উপাচার্য সাধনের। তাঁর সংযোজন: “আমার প্রাথমিক কাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখা। পরিচালন ব্যবস্থা সচল রাখা। আন্দোলন করা সকলেরই অধিকার। তবে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়। প্রায় দেড় মাস ধরে চরম অচলাবস্থা তৈরি করা হয়েছে। পড়ুয়ারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গবেষণার কাজ ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষকেরা ঠিক মতো ক্লাস নিচ্ছেন কি না, সোমবার থেকে তা খোঁজখবর করব।” আন্দোলনকারীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি।
এ দিকে, সাধন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক। সে চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর চেয়ে সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন সাধন, জানাচ্ছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। এই মুহূর্তে সাধন যাদবপুর থেকে ‘লিয়েন’ নিয়ে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তবে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, ‘লিয়েন’-এ থাকাকালীন কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েচে। ওই মহলটির দাবি, স্বেচ্ছাবসর নিতে হলে সাধনকে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে এক দিনের জন্য হলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যোগ দিতে হবে। কিন্তু এখন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের যা পরিস্থিতি তাতে সাধনকে এখান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। কারণ, বিক্ষোভকারী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের দাবি, প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার আর্থিক অনিয়মের প্রশ্নে উপাচার্যকে আগে সেই টাকার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। যদিও, পুরো বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সাধন।