Farmers

ঝড়-বৃষ্টিতে বারবার সংশয় ফসলে

রবি মরসুমে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছেন আলু চাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা ও মেমারি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০১:৪৪
Share:

আলু খেত থেকে জল তুলে বাইরে ফেলছেন চাষি। বর্ধমানের টোটপাড়া গ্রামে। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস

ফসল বোনা-কাটা অথবা মাঝপথে, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়তে হচ্ছে জেলার চাষিদের। এতে এক দিকে যেমন ক্ষতির বহর বাড়ছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে ফসল চক্র, মরসুম অনুযায়ী চাষের হিসাব-নিকাশ। সব মিলিয়ে সমস্যায় পড়েছেন জেলার লক্ষ লক্ষ চাষি।

Advertisement

রবি মরসুমে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছেন আলু চাষিরা। তাঁদের দাবি, গত বছরের শুরুর দিকে আলু ওঠার মুখে নিম্নচাপ দেখা দেয়। পচে নষ্ট হয়ে যায় প্রচুর আলু। এ বার এখনও পর্যন্ত আলু চাষের বয়স ৭০-৭৫ দিন। চাষের শেষ পর্যায়ে মাঠ থেকে আলু তুলতে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ঝড়-বৃষ্টি এবং মেঘলা আবহাওয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দমকা ঝড়ের সঙ্গে বেশ কিছুটা বৃষ্টি হয়। ভারী বৃষ্টিপাত হয় বুধবার সন্ধ্যাতেও। ফলে, নিচু এলাকার বহু জমিতে জল জমে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন চাষিরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জমি থেকে জল বার করার কাজ করতেও দেখা যায় চাষিদের।

কালনা মছলন্দপুর এলাকার আলু চাষি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, গুপ্তিপুরের সাধন পণ্ডিত, আয়মাপাড়ার ভবেশ ঘোষ, দেবেশ ঘোষেরা জানান, এ বার দেরি করে আলু চাষ শুরু হয়েছে। এমনিতেই ফলন ভাল হয়নি। তার উপরে চাষের শেষ পর্যায়ে বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে গিয়েছে। পাম্প মেশিন দিয়ে জল বার করে দিলেও দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না, দাবি তাঁদের। আবারও বৃষ্টি হলে আলু পচে যাবে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। জামালপুরের দেবু দাস, কাশেম মল্লিকেরা মনে করছেন, কুয়াশা, বৃষ্টির জন্যে ফসল তুলতে সমস্যা হবে।

Advertisement

ক্ষতির মুখে পড়েছে পেঁয়াজ চাষও। জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয় কালনা মহকুমায়। চাষের এলাকা প্রায় ১২ হাজার হেক্টর। পেঁয়াজ চাষিদের দাবি, ঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে পেঁয়াজের ফুল। জল জমে গিয়েছে খেতেও। কালনার ধর্মডাঙা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘গতবারেও পেঁয়াজ ওঠার মুখে বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। এর পরে আরও বৃষ্টি হলে গতবারের পরিস্থিতি ফিরে আসবে।’’

গত এক বছর ধরেই বারবার তাঁদের প্রকৃতির সঙ্গে লড়তে হয়েছে বলেও চাষি করেছেন চাষিরা। তাঁরা জানান, অক্টোবর মাসে পর পর তিন বার নিম্নচাপ, বৃষ্টির মুখে পড়তে হয়। এতে একদিকে যেমন আমন ধান কাটতে দেরি হয়, তেমনি নষ্ট হয়ে যায় বহু পেঁয়াজের বীজতলা। এই ধাক্কা কাটতে না কাটতে নভেম্বর মাসের ৮ এবং ৯ তারিখে ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে ফের ক্ষতি হয় চাষে। ক্ষতি কাটিয়ে জমি তৈরি করে আলু, পেঁয়াজ চাষ শুরু করেন চাষিরা। তবে চাষের পুরো প্রক্রিয়াটাই পিছিয়ে যায় মাসখানেক। জানুয়ারি মাসেও বৃষ্টির জেরে সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের।

কালনার সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রত্যেক চাষিকে প্রতি মরসুমে ফসল বিমার দিকে ঝুঁকতে হবে। তার সঙ্গেই জমির চরিত্র বুঝে চাষাবাদ করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, বুধবার রাতের বৃষ্টিতে নিচু এলাকার বেশ কিছু জমিতে জল জমেছে। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতি বাড়বে। মহকুমা উদ্যানপালন আধিকারিক পলাশ সাঁতরার পরামর্শ, এই সময় চাষিরা অন্তত দিন সাতেক জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার কাজ বন্ধ রাখুন। সহ কৃষি অধিকর্তাদের এলাকা ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে, বলে জানান জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement