ফুটপাত দখল করে চলছে বেচাকেনা। নিয়ামতপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী।
উদ্যোগে যে হয়নি তা নয়। তবে তা শেষ অবধি ফলপ্রসূ হয়নি। কখনও ফুটপাত থেকে হকারদের অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে আবার ফুটপাতে এসে বসেছেন হকারেরা। আবার কখনও দখল তোলার উদ্যোগ হতেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় পিছু হটেছে প্রশাসন।
শেষ বার আসানসোল বাজারের ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ হয়েছিল ২০১৬ সালে। শহরের তৎকালীন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি সে বছর ২৯ ডিসেম্বর আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে হকারদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। ফুটপাত থেকে উঠে যাওয়ারর জন্য হকারদের ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়। কিন্তু পুনর্বাসনের দাবিতে হকারেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পুরসভাতেও বিক্ষোভ-অবস্থান হয়। তুমুল বিক্ষোভে পড়ে পিছু হটেন পুর কর্তৃপক্ষ। স্থগিত হয়ে যায় ফুটপাত দখলমুক্তির অভিযান।
২০০৬ সালে সিপিএম পরিচালিত আসানসোল পুরবর্ডের মেয়র তাপস রায়ের নেতৃত্ব আসানসোল বাজারে ফুটপাতের দখল তোলা হয়েছিল। তখন হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আসানসোলের গির্জা মোড় লাগোয়া অঞ্চলে একটি হকার্স মার্কেট তৈরি করে সেখানে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৯ সালে পুরসভায় ক্ষমতার পালাবদল হয়। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। অভিযোগ, তার পরে নজরদারির অভাবে আবার ফুটপাত দখল হতে শুরু করে। এলাকার অনেকের দাবি, পুনর্বাসন পাওয়া হকারদের অনেকেই পুরনো জায়গায় ফিরে আসেন। আবার, নতুন এক দল হকারও ফুটপাতে বসে পড়েন।
মুখ্যমন্ত্রী ফুটপাত থেকে দখল তোলার কথা বলার পরে তা স্বাগত জানিয়েছে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘আসানসোল বাজার ফুটপাত হকার ইউনিয়ন’। সংগঠনের সভাপতি রাজু অহলুওয়ালিয়া বলেন, বৈধ হকারদের পুনর্বাসন দিয়ে ফুটপাত খালি করা হোক। বহিরাগত ভুয়ো হকারদের চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করা হোক।’’ তাঁর অভিযোগ, শেষ বার ২০১৬ সালে হকারদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে বৈঠক করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। তখন মাত্র চারশো হকার ছিলেন। তাঁদের নামের তালিকা কর্তৃপক্ষকে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরে আর কোনও বৈঠক বা পদক্ষেপ করা হয়নি। ইতিমধ্যে কিছু ‘দালাল’ টাকার বিনিময়ে অন্য রাজ্য থেকেও লোক এনে ফুটপাতে বসিয়েছে। সেই সংখ্যা বেড়ে এখন প্রায় চার হাজার হয়েছে। তাঁদের চিহ্নিত করে তুলে দেওয়ার দাবি তুলেছেন রাজু।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কবে পালন করা হবে? আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা এক বছর আগে থেকে শহরের সরকারি জমি থেকে জবরদখল উচ্ছেদে নেমেছি। বাজারের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছি। তাতে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে।’’ তিনি জানান, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া শহরেও দখলমুক্ত করার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কাজ শুরু করা হবে। মেয়রের দাবি, গত বছর এপ্রিলে আসানসোলের কালিপাহাড়ি থেকে কুমারপুর পর্যন্ত জিটি রোড এবং সেনরেলে রোডের দু’পাশের সরকারি জমির দখল তোলা হয়েছে। প্রায় ২০০টি অবৈধ নির্মান ভাঙা হয়। ২০২১ সালে পুরবোর্ডের প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বরাকর স্টেশন রোড ও আসানসোলে জেলাশাসকের দফতর থেকে বাবুয়াতালাও পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের দখল তুলেছিলেন। তার পরে শিল্পাঞ্চলবাসীর মূল দাবি, বাজারের ফুটপাত দখলমুক্ত করা হোক।
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, ‘‘সেই আশায় বালি। ভোটের রাজনীতি করার জন্য যথেচ্ছ ফুটপাত দখল করিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। এখন মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিলেও দখল তোলার সম্ভাবনা কম।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনিক দৃঢ়তা থাকলে ফুটপাত দখলমুক্ত করা যায়, তা ১৮ বছর আগে সিপিএমের পুরবোর্ড করে দেখিয়েছিল। বর্তমান শাসক দলের কাছে তা আশা করা যায় না।’’
রাজনৈতিক টানাপড়েন রয়েছেই। কিন্তু রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের নির্দেশ পালিত হয় কবে, সে দিকেই তাকিয়ে শিল্পাঞ্চলবাসী।
(শেষ)