ঘটনার পরে আসানসোল আদালতে পুলিশকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
শুনানির জন্য বিচারাধীন বন্দির কোমরে প্যান্টের অংশ ধরে এজলাসের দিকে হেঁটে আসছিলেন এক প্রৌঢ় কনস্টেবল। আচমকা সজোরে ধাক্কা দিল বন্দি। বেসামাল হয়ে পড়লেন ওই পুলিশকর্মী। আর মুহূর্তের মধ্যে হাত ছাড়িয়ে চম্পট দিল বন্দি। বুধবার দুপুরে আসানসোল আদালত চত্বরের এই ঘটনা নিয়ে হুলস্থূল বাধে।
পুলিশ জানায়, মহম্মদ সাহাবুদ্দিন নামে ওই অভিযুক্ত বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি। বধূ নির্যাতন ও শাশুড়িকে খুনের মামলার শুনানির জন্য তাকে কিছু দিন আগে আসানসোলে আনা হয়েছিল। এ দিন চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের এজলাসে শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
আদালতে উপস্থিত লোকজনের সূত্রে জানা যায়, পুলিশকর্মীকে ধাক্কা মেরে সাহাবুদ্দিন পাঁচিলের দিকে দৌড়ে যায়। পাঁচিল টপকে জঙ্গল লাগোয়া রেললাইন বরাবর ছুটে পালায়। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ওই পুলিশকর্মী ও তাঁর সহকর্মীরা সাহাবুদ্দিনকে ধাওয়া করলেও, কোনও লাভ হয়নি।
পুলিশ জানায়, আদতে জামতাড়ার বাসিন্দা সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে জামুড়িয়া থানায় ২০১৫-য় বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী। পুলিশ সাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করে। এই সময়ে তার স্ত্রী কুলটিতে বাপেরবাড়ি চলে আসেন। তিন মাস পরে জামিন পেয়ে সাহাবুদ্দিন জামতাড়া চলে যায়। ২০১৭-য় কুলটির বেজডিহিতে শ্বশুরবাড়িতে এসে শ্বাশুড়িকে গুলি ছুড়ে খুন করে সাহাবুদ্দিন চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় তদন্ত করে কুলটি থানা।
এই ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এর আগে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাহাবুদ্দিন চম্পট দিয়েছিল। একই বন্দির দু’বার পালানোর ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ। সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এমন এক জন অভিযুক্তকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে পুলিশের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। কেন এই ঘটনা, তার তদন্তও হওয়া উচিত।’’
বিষয়টি নিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে।’’ পুলিশ জানায়, শহরে নাকা-তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি, ‘সিল’ করা হয়েছে আন্তঃজেলা ও পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা।