প্রতীকী চিত্র
সম্প্রতি সরকার ঘোষণা করেছে, পুরোহিতদের হাজার টাকা ভাতা পুজোর মাস থেকেই চালু হবে। যে পুরোহিতদের বাড়ি-ঘর নেই, আবাস যোজনায় তাঁদের বাড়িও করে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই ঘোষণা করার পরেই ভাতা পাওয়ার মানদণ্ড, আবেদনের পদ্ধতি কী, তা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলের পুরোহিতেরা।
আসানসোল মহকুমার এথোড়া গ্রামে প্রায় আট বছর ধরে চলছে একটি পুরোহিত প্রশিক্ষণ টোল। সেখানে শিক্ষার্থী বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং ঝাড়খণ্ড-সহ নানা এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, সরকারি ঘোষণার পরে তাঁরা উৎসাহ নিয়ে নিজের-নিজের পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজখবর করতে যান। টোলের সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা একটা স্বীকৃতি। কিন্তু কোথায় গেলে ভাতা পাব, তা কেউই জানাতে পারেননি।’’ টোলের সদস্য ও স্থানীয় একটি কলেজের সংস্কৃত সাম্মানিকের পড়ুয়া অভিষেক চক্রবর্তী জানান, এই ভাতা নবীন প্রজন্মকে পূজার্চনায় উৎসাহিত করবে। তবে তাঁর দাবি, ‘‘সাম্মানিক দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন স্বচ্ছতা থাকে।’’ ভাতার জন্য কোথায়, কী ভাবে আবেদন জানাতে হবে, সে জন্য মহকুমাশাসকের (আসানসোল) দফতরে খোঁজখবর করবেন বলে জানান ‘এথোড়া বুড়ি কালীমাতা চতুষ্পাঠী’র সম্পাদক প্রীতম চক্রবর্তী।
পাশাপাশি, কোন যোগ্যতার মানদণ্ডে পুরোহিতদের ভাতা দেওয়া হবে, সে মানদণ্ড বিচার করবেন কারা, তা নিয়েও আগ্রহী বিভিন্ন পুরোহিত সংগঠনের প্রবীণ পুরোহিতেরা। ‘সংস্কৃত সংস্কৃতি উন্নয়ন সমিতি’র রাজ্যের মুখ্য কর্মসচিব তথা প্রায় তিন দশক ধরে বিভিন্ন পৌরোহিত্য প্রশিক্ষণ টোলের প্রধান পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চাই, যোগ্য পুরোহিতেরা যেন এই ভাতা পান। এ জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড ঠিক করে রাজ্যের প্রথিতযশা পুরোহিতদের মাধ্যমে যোগ্যতা বিচার করে, প্রাপকদের নাম মনোনীত করা হোক।’’ কার্তিকবাবু জানান, যোগ্য ও প্রশিক্ষিত পুরোহিত হতে গেলে আদ্য, মধ্য ও উপাধি— এই তিনটি পাঠ্যক্রম সফল ভাবে শেষ করতে হবে। প্রবীণ পুরোহিতদের মতে, এই পাঠ্যক্রম কেউ যথাযথ ভাবে শেষ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখে ভাতা দেওয়া হোক। না হলে ভাতার টাকা ‘অপাত্রে’ চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
পুরোহিতদের এমন সংশয়ের উত্তর ‘আপাতত’ প্রশাসনের কাছেও নেই। তৃণমূল পরিচালিত এথোড়া পঞ্চায়েত প্রধান মিঠু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কী ভাবে ভাতা মিলবে, তা নিয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনও তথ্য নেই। এটা পুরোহিতদের জানিয়েও দিয়েছি।’’ মহকুমাশাসক (আসানসোল) দেবজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরোহিত ভাতার বিষয়ে কোনও তথ্য বা বিজ্ঞপ্তি এখনও আসেনি। এলে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’