বর্ধমানে বৈঠকে মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
চেক নয়, ধানের সহায়ক মূল্য ফের সরাসরি চাষির অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে এসে এ কথাই জানালেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আজ, শুক্রবার থেকে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রাজ্যে।
এ দিন খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চাষির অ্যাকাউন্টে ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধানের সহায়ক মূল্য পৌঁছে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’ খাদ্য দফতরের একটি সূত্র জানায়, দুই বর্ধমান-সহ রাজ্যের ছ’টি জেলায় যে ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হত, মার্চের গোড়া থেকে সেই ব্যাঙ্কের উপরে ‘নিয়ন্ত্রণ’ শুরু করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তখন থেকেই চেক সংক্রান্ত সমস্যা শুরু হয়। কয়েকটি জেলায় ধান কেনার উপরে তার প্রভাব পড়ে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে দায়িত্ব দেওয়া হলেও চেক-সমস্যা মেটেনি। তার পরেই ফের সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, সাধারণত গণবণ্টন ব্যবস্থা চালাতে রাজ্যে ৫২ লক্ষ টন চাল প্রয়োজন পড়ে। আমন মরসুমেই তার ৯০ শতাংশ মজুত হয়ে যায়। ‘লকডাউন’ চলায় রাজ্যের মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে পাঁচ লক্ষ টন চাল প্রয়োজন হচ্ছে। সে কারণে চালের খোঁজে জেলায়-জেলায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।
জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘জুন পর্যন্ত চাল মজুত রয়েছে। জুলাই থেকে প্রতি মাসে পাঁচ লক্ষ টন চাল প্রয়োজন। আমরা প্রতি মাসে পাচ্ছি বড়জোর ১৫ হাজার টন। সে জন্য রাজ্যের শস্যগোলা থেকে বৈঠক শুরু করলাম। চালকল মালিকদের অনুরোধ করেছি, বকেয়া ধান ১৫ মে-র মধ্যে দিয়ে দিন।’’
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব বর্ধমানে প্রতিদিন ২,২০০ টন ধান মিলছে। তা বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টন করতে বলা হয়েছে। চালকল থেকে খাদ্য দফতরের বকেয়া রয়েছে এক লক্ষ ৩৬ হাজার টন। বরাত পাওয়ার পরেও যে ২৯টি চালকল সরকারকে চাল দেয়নি, সেগুলির মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, কয়েকজন চালকল মালিককে ভর্ৎসনাও করা হয়েছে। দু’জন চালকল মালিক বৈঠকে না এসে কর্মীদের পাঠানোয় কর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে ওই চালকল মালিকেরা এসে দেখা করেন।
এ দিন প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এর আগে গণবণ্টন ব্যবস্থার উপরে এত চাপ আসেনি। প্রায় ১০ কোটি মানুষের জন্য চাল সংগ্রহ করতে হবে। বকেয়া চাল পাওয়ার জন্য মন্ত্রীকে আসতে হচ্ছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ বর্ধমানের চালকল মালিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের সমস্যা মন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। আমরাও বকেয়া ধান দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
গোলায় আমন ধান মজুত রয়েছে অনেক চাষির। মাঠে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গিয়েছে বহু জায়গায়। সেই ধান কোথায় মজুত করা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন বলে দাবি অনেক চাষির। হাতে নগদ অর্থও কমে এসেছে বলে অভিযোগ তাঁদের। খাদ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে ২০ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। গ্রামে-গ্রামে গিয়ে ধান কেনার উদ্যোগ হচ্ছে। জমে থাকা আমন ধানও নেওয়া হবে। সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করার পরে, চাষির মোবাইলে মুখ্যমন্ত্রীর ‘মেসেজ’ যাবে, এমন উদ্যোগের ভাবনা চলছে বলে খাদ্য দফতর সূত্রের খবর।
আজ, শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় দফায় রেশনের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এপ্রিলে রেশন ব্যবস্থায় ডিলারদের ভূমিকা, সময়ে খাদ্যসামগ্রী না পৌঁছনোর ফলে দোকান না খোলা-সহ নানা অভিযোগ উঠেছিল। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব ডিলারের কাছে দোকান খোলার মতো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে গিয়েছে। উপভোক্তারা ১৫ দিনের আটা নেবেন।’’