প্রতীকী চিত্র।
এ বারের আসানসোল পুরভোট, তাঁদের কাছে কার্যত ‘মর্যাদা রক্ষা’র লড়াই। রাজনৈতিক মহলের মতে, ঠিক এ চোখেই আসন্ন পুরভোটকে দেখতে চাইছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। বামফ্রন্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পুরবোর্ডের ‘দলছুট’ বিদায়ী বাম কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডগুলি ধরে রাখতে, উপযুক্ত রণকৌশলও তৈরি করেছেন নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে, তা বাস্তবায়ন করার কাজও শুরু হয়েছে। তবে এ নিয়ে ‘খোঁচা’ দিতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতৃত্বও। তাঁদের পাল্টা দাবি, এ বার আর কোনও রণকৌশল কাজে দেবে না।
পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ২০১৫-য় পুরভোটের পরিস্থিতি বামেদের কাছে মোটেই অনুকূল ছিল না। কারণ, মাত্র চার বছর আগেই রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হয়। জেলার সাবেক কুলটি ও আসানসোল পুরসভা ২০০৯ থেকে তৃণমূলের দখলে রয়েছে। সাবেক রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভা বামেদের দখলে থাকলেও, দুই পুরসভাতেই ক্ষমতা ‘দখল’ করতে উঠে পড়ে লাগে তৃণমূল।
বাম নেতারা মনে করেন, যার প্রথম পদক্ষেপ, আসানসোলের সঙ্গে রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়াকে যুক্ত করে বৃহৎ পুরসভা তৈরি করা। তাঁরা জানান, এই ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতিতেও গত বার ১৭টি ওয়ার্ড দখল করে বামেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এর অর্থ হল, ওই ওয়ার্ডগুলিতে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা ভাল। ভোটারেরা আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সাত জন বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে চলে যান। ফলে, ভোট ‘সুরক্ষিত’ থাকেনি।”
গত বার ১০, ১৭, ২৪, ২৯, ৩১, ৩৫ ও ১০৩ এই সাতটি ওয়ার্ড থেকে জয়ী বিদায়ী বাম কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে যোগ দেন। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বংশোগোপাল চৌধুরী বলেন, “এই ওয়ার্ডগুলি এ বারও আমাদের কাছে মর্যাদার লড়াই। সেগুলি ধরে রাখার জন্য উপযুক্ত রণকৌশলও তৈরি করা হয়েছে।”
কী এই রণকৌশল? বাম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদায়ী কাউন্সিলররা ‘দলছুট’ হওয়ার পরেই, সেখানে সংগঠনের তরফে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়। ভোটের মুখে বাড়ি-বাড়ি প্রচারে গিয়ে কাউন্সিলরদের ‘দলছুট’ হওয়ার প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বেহাল নাগরিক পরিষেবা তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রকাশিত নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রস্তাবিত পরিষেবা সংক্রান্ত কাজগুলি ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
এ দিকে, ‘দলছুট’ বিদায়ী বাম কাউন্সিলরদের মধ্যে এ বার তৃণমূলের তরফে চার জনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঊষা পাসোয়ান, ১৭ নম্বরে রিনাকুমারী প্রসাদ, ২৯ নম্বরে কবিতা যাদব।ঊষা, রিনা, কবিতারা গত বার লড়েছিলেন যথাক্রমে সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক (ফব), সিপিআইয়ের হয়ে।এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন যথাক্রমে সিপিএমের অঞ্জলি দেবী, ফব-র পিন্টু হেলা ও সিপিআইয়ের হেমন্ত মিশ্র। এ ছাড়া, এ বার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। তাই এই ওয়ার্ডের গত বারে জয়ী সিপিএম কাউন্সিলর ওয়াসিমুল হককে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এই ওয়ার্ডে সিপিএম মহম্মদ ইফতেকারকে প্রার্থী করেছে। ৩১, ৩৫ ও ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ‘দলছুট’ বিদায়ী বাম কাউন্সিলরদের এ বার প্রার্থী করেননি তৃণমূল নেতৃত্ব।
বামেদের এই রণকৌশল প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা অভিজিৎ ঘটক বলেন, “যাঁরা বামফ্রন্ট ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মাধ্যমেই বাম-বিরোধী প্রচার করে ভোটারদের ‘আস্থা’ অর্জন করা হয়েছে।” অভিজিতের আশা, আসানসোল ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এ বারও তৃণমূলের উন্নয়নে শামিল হবেন।