প্রতীকী ছবি।
বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে টাকা এসেছিল অ্যাকাউন্টে। কিন্তু হুমকি দিয়ে সই জাল করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা, কর্মীরা সেই টাকা তুলে নিয়েছেন, অভিযোগ করলেন আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরের একাধিক বাসিন্দা।
জেলার অনুন্নত শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রকল্প আধিকারিককে চিঠি দিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, শাসকদলের নেতা সুশান্ত রায় ভয় দেখিয়ে কারও কাছে ৫ হাজার, কারও কাছে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। টাকা না দিলে পরবর্তী কিস্তি আটকে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই নেতা। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘এ সব মিথ্যা কথা, কেউ চক্রান্ত করছে।’’
ওই গ্রামেরই এক আদিবাসী বৃদ্ধা রানি হাঁসদাও জেলা অনগ্রসর কল্যাণ দফতরে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, রেশন বন্ধ, বার্ধক্য ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার নাম করে টিপ সই জাল করে এক ব্যক্তি তাঁর পাসবই থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। বাধ্য হয়ে দুটি গরু বিক্রি করে বাড়ি শেষ করতে হয়েছে তাঁকে। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসনেও।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ই-মেল মারফত একটি চিঠি আমাদের কাছে এসেছে। সেচ দফতরের এক অস্থায়ী কর্মীর নামে অভিযোগ রয়েছে। আমরা তদন্ত করার জন্য ওই দফতরকে বলেছি।’’ স্থানীয় ভাবে জানা যায়, সেচ দফতরের ওই কর্মী, আশিস প্রামাণিক এলাকায় তৃণমূলের ‘প্রভাবশালী’ কর্মী বলে পরিচিত। এর আগেও ওই কর্মীর বিরুদ্ধে এক মহিলার সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। তবে বারবার ফোন করে ও এসএমএস করার পরেও যোগাযোগ করা যায়নি তাঁর সঙ্গে।
গত ১৮ অক্টোবর ওই বৃদ্ধা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর করার জন্য তিনি দিগনগর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে আবেদন করেছিলেন। সেই মত গুসকরার ধারা পাড়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা আসে। এরপরেই স্থানীয় পুলকেশ ঘোষ (যিনি এলাকায় তৃণমূল করার জন্য পরিচিত) তাঁর কাছে এসে জানায়, ঘর তৈরির ইমারতি দ্রব্য তিনিই সরবরাহ করবেন। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল প্রথম দফায় ৩৮ হাজার টাকা, পরে ১৯ এপ্রিল আরও ৩০ হাজার টাকা তাঁর হাতে তুলে দেন রানি হাঁসদা। তাঁর অভিযোগ, ওই যুবক তাঁর বাড়ি থেকে ৮ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে চলে গিয়েছে। তার দাম এখনও দেননি। এরপরেই আসরে আসেন আশিস প্রামাণিক। রানিদেবীর অভিযোগ, “পাসবই নেওয়ার জন্য বারবার বাড়ি আসছিলেন আশিসবাবু। না দেওয়ায় উনি প্রথমে রেশন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। তারপরে বার্ধক্য ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে শাঁসিয়ে যান। তখন আমি পাসবই দিয়ে দিই।’’ তাঁর দাবি, টিপসই ছাড়াই ওই ব্যক্তি জালিয়াতি করে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর ৪৬ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। রবি মুর্মু, বাসু টুডু, জগদীশ হাঁসদা, চৈতন্য টুডুদেরও দাবি, তৃণমূলের কিছু কর্মী ভয় দেখিয়ে, তাঁদের সই জাল করে টাকা তোলা হয়েছে।
ওই গ্রামেরই হেলা বাউরি, অজয় কর্মকার, হারাধন বাগদি, শঙ্কর রানা, সুদিন বাউরি, চম্পা বাউরিদের মতো অনেকে সম্প্রতি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিকানায় চিঠি দিয়েও ওই অভিযোগ জানিয়েছেন।
আউশগ্রাম ১ ব্লকের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শ্রীকুমার রায়ের যদিও দাবি, ‘‘ওঁরা স্বেচ্ছায় দলীয় দফতর তৈরির জন্য টাকা দিয়েছেন। স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ঘর তৈরি করছেন। তারপরেও অভিযোগ করেছেন?’’
তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে দলের একটি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যাঁদের কাছে সরকারি আবাসন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৫-১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে, যেমন করেই হোক অভিযুক্ত দলীয় কর্মী বা নেতাকে সেই টাকা ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের প্রকল্প আধিকারিক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘সরাসরি অভিযোগকারীদের কথা বলার পরে পরবতী পর্যায়ে এগিয়ে যাব।’’