potato farmers

দাম নেই, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আলু চাষি

পূর্ব বর্ধমানে শীতকালীন অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল আলু চাষের উপরে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৪
Share:

মাঠ থেকে আলু তুলে নিেয় যাওয়া বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র

জলদি আলু উঠতে শুরু করেছে মাঠ থেকে। ফলনও হয়েছে ভাল। চাষিদের দাবি, বস্তা পিছু যে দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে তাতে লোকসান পিছু ছাড়ছে না তাঁদের। কৃষি দফতর অবশ্য এখনই লাভ-ক্ষতির অঙ্কে যেতে চায়ছে না। কর্তাদের দাবি, ফসল কাটার পরে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে পরিস্থিতিবোঝা যাবে।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানে শীতকালীন অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল আলু চাষের উপরে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। এ বার চাষের এলাকা ৬৭ হাজার হেক্টরের কাছাকাছি। বেশির ভাগ চাষিই জ্যোতি আলু চাষ করেন। তবে জ্যোতির থেকে কিছুটা আগে জমি থেকে ওঠে পোখরাজ, এসএসএস১, কুফরি জাতের আলু। সাধারন আলুর থেকে কিছুটা ফলন কম হলেও বাড়তি লাভের আশায় কালনা, পূর্বস্থলী ২, জামালপুর, মেমারি ২ ব্লকের বহু চাষিই জলদি আলুর চাষ করেন। কালনা মহকুমার পাঁচটি ব্লকে এ বার আলু চাষ হয়েছে ১২,৯০০ হেক্টর জমিতে। চাষিরা জানান, বিঘা প্রতি জমিতে ৯০ থেকে ১২০ বস্তা ফলনের আশা করছেন তাঁরা। আর ফলন বেশি হওয়াতেই দাম তলানিতে, দাবি তাঁদের।

পূর্বস্থলী ২ ব্লকের সিহিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ননীগোপাল বণিক বলেন, ‘‘ফলন খারাপ হয়নি। বিঘা প্রতি জমিতে ৭০ থেকে ৮০ বস্তা (এক বস্তায় আলু থাকে ৫০ কেজি) আলুর ফলন হয়েছে। তবে সেই আলু বিক্রি করতে হয়েছে দুশো টাকা বস্তা পিছু। অথচ বিঘা প্রতি জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার। ফলে বিপুল লোকসান হয়েছে আলু বিক্রি করে।’’ ধীতপুর এলাকার আলু চাষি দিবাকর দাসও বলেন, ‘‘চাষের জন্য বীজ কেনা হয়েছিল কুইন্টাল প্রতি দু’হাজার টাকায়। রাসায়নিক সার, কীটনাশক, অনুখাদ্য, গোবর সার, শ্রমিকের খরচও বেড়েছে। যাঁরা অন্যের জমি চুক্তিতে নিয়ে চাষ করেন, তাঁদের খরচ আরও বেশি। অথচ বস্তা পিছু দুশো থেকে আড়াইশো টাকায় আলু বিক্রি হওয়ায় চাষের খরচের অর্ধেক টাকাও ওঠেনি। আলু চাষ করা ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’’ আলু, আনাজের দাম তলানিতে পৌঁছে যাওয়ায় আড়ত চালাতে সমস্যা হচ্ছে দাবি করেছেন রণজিৎ দাস নামে পূর্বস্থলীর এক আড়তদার। চাষিদের দাবি, বস্তা পিছু চারশো টাকা দর মিললে লোকসান এড়ানো যাবে। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি আলুর বাজার কিছুটা বেড়েছে। বিভিন্ন জেলায় জলদি জাতের আলু (পোখরাজ) ২৪০-২৫০ টাকা বস্তা পিছু বিক্রি হয়েছে। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আনন্দ সাঁতরা জানিয়েছেন, এ বারে ফলন ভাল হয়েছে। তার উপরে আগের বছরের আলু এখনও প্রচুর রয়ে গিয়েছে। ফলে জলদি আলুর তেমন বাজার নেই। যদিও ১ মার্চ থেকে হিমঘরগুলি খুলে যাবে। দ্রুত জমি থেকে জ্যোতি আলু তোলাও শুরু হয়ে যাবে, জানান তিনি।

Advertisement

মহকুমা কৃষি দফতরের এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘এ বার আলু চাষের জন্য অনুকূল আবহাওয়া ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগও নেই। ফলে ভাল ফলন আশা করা যাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ফলন বেশি হলে দাম পেতে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে এখনও বেশির ভাগ আলু মাঠ থেকে তোলা শুরু হয়নি। তাই ফলন নিয়ে বলার মতো পরিস্থিতি নেই। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হেক্টর প্রতি জমি থেকে ৩০ থেকে ৩২ টন আলু মেলে। এ বার ফলন ৩২ থেকে ৩৫ টন মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় চাষিরা ৩৮ টনও ফলন পেতে পারেন। জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা সুকান্ত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে শীত রয়েছে এ বার। যা বহু বছর দেখা যায়নি। অনুকূল পরিস্থিতির কারণে এ বার বেশি ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে ফলনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে ফসল কাটার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement