প্রতীকী ছবি
পাঁচটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৭২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাঁর অধীনে। এ ছাড়াও, রয়েছে নানা দফতর। কিন্তু এ সবের মাথায় যাঁর থাকার কথা, সেই পদই ফাঁকা প্রায় আড়াই বছর ধরে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমায় সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক (এসিএমওএইচ) না থাকায় কাজকর্মে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, আড়াই বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য ওই পদ ছাড়েন কবিতা শাসমল। তাঁর স্বামী রতন শাসমল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার। খাতায়-কলমে অস্থায়ী ভাবে তাঁকে এসিএমওএইচ-এর দায়িত্ব দেওয়া আছে। কিন্তু তিনি হাসপাতালের কাজ ছেড়ে এসিএমওএইচ দফতরে আসতে পারেন না বলে অভিযোগ। বিভিন্ন ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ), চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিযোগ করেন, মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর থেকেই যে সব সমস্যা সমাধান হওয়ার কথা, স্থায়ী এসিএমএওএইচ না থাকায় সে সবের জন্য তাঁদের বর্ধমান ছুটতে হচ্ছে। সারা বছর দফতরের ‘ফিল্ড ওয়ার্ক’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে। সে সব কাজে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখন প্রতিদিন করোনা-সম্পর্কিত তথ্য জেলায় পাঠাতে হচ্ছে। তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে এসিএমওএইচ দফতরের ভূমিকা থাকছে না।’’
বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, করোনা-সম্পর্কিত নানা নির্দেশ, তথ্য, বিভিন্ন রকমের ‘কিট’ এসিএমওএইচ দফতরের মাধ্যমে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর কথা। কিন্তু কাটোয়া মহকুমার ক্ষেত্রে সরাসরি ব্লক স্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এমনকি, নিবিড় জনসংযোগের জন্য আশাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি পাঠানোর কাজ নির্দেশিকা অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তা-ও নজরে রাখতে হয় জেলা স্তর থেকে। এর সঙ্গে নিয়মিত সমীক্ষার কাজে ঘাটতি থাকছে বলেও অভিযোগ।
এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘কেতুগ্রাম ১ ব্লকে এক জনের করোনা-রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মহকুমা স্তরে নতুন পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী এসিএমওএইচ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।’’ অভিযোগ, রাজ্য বা জেলা স্তরের নির্দেশ নিচু স্তরে পৌঁছতে পর্যন্ত যথেষ্ট সময় লাগছে। সমন্বয়ের অভাব তৈরি হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিটি ব্লকে কয়েকটি করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করার কথা। সে জন্য ‘কমিউনিটি হেল্থ ওয়ার্কার’দের নাম চাওয়া হয়েছিল। কাটোয়া মহকুমা থেকে তিনটি ব্লক কোনও নাম পাঠায়নি। তা পাঠানোর জন্যও কেউ তাগাদাও দেয়নি। এ রকম নানা ছোটখাট সমন্বয়ের অভাব লেগেই রয়েছে।’’ শুধু স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সমন্বয় নয়, প্রশাসনিক সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
সমস্যা যে হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছেন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার রতন শাসমল। তিনি বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দু’টি পদের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। যেটুকু সমস্যা হচ্ছে, তা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা (ডেপুটি সিএমওএইচ) সামলে দিচ্ছেন।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘জেলা থেকেই পুরো পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। ব্লক থেকে রিপোর্ট সরাসরি আমার দফতরে আসছে। এসিএমওএইচের পদে নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্যভবনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নিয়োগ হলে সমস্যাগুলি মিটে যাবে।’’