দূষিত দুর্গাপুরের বাতাস। —নিজস্ব চিত্র।
এ যেন দিল্লির সঙ্গে টক্কর। দুর্গাপুরের দূষণের মাত্রা দেখে এমনই বলছেন শহরবাসী। মঙ্গলবার দিনভর দুর্গাপুরে বাতাসের সার্বিক গুণমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ছিল ৩০০-র অনেক উপরে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তালিকা অনুযায়ী যা ‘খুব খারাপ’। হাওয়া না বওয়ায় এই পরিস্থিতি, মত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের।
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ থেকে বাতাসের গুণমান সহজবোধ্য করতে সূচক নির্ধারণ শুরু হয়। বাতাসের গুণমান সূচক ০-৫০ হলে তা ভাল। ৫১-১০০ সন্তোষজনক। সূচক ১০১-২০০ হলে তা মাঝারি মানের। সূচক ২০১-৩০০ হলে খারাপ এবং ৩০১-৪০০ হলে খুব খারাপ পর্যায়ে পড়ে। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দিল্লিতে সকাল ৮টায় ৩৭৭, দুপুর ১২টায় ৩৫৬, বিকাল ৪টায় ৩১৫ এবং সন্ধ্যা ৬টায় ২৯৫ ছিল বাতাসের মানের সূচক। সেখানে দুর্গাপুরের সিধো-কানহু ইন্ডোর স্টেডিয়ামে লাগানো স্বয়ংক্রিয় দূষণ পরিমাপক যন্ত্রের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়গুলিতে শহরের বাতাসের গুণমান সূচক ছিল যথাক্রমে ৩৮২, ৩৮৬, ৩৯১ ও ৩৭৭। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আঞ্চলিক চিফ ইঞ্জিনিয়ার অরূপ দে বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের কোথাও কোথাও সূচক প্রায় ৪০০-র উপরে চলে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। হাওয়া না থাকায় ধূলিকণা জমে রয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।’’
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে গত কয়েক বছরে বহু কল-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা উৎপাদনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে মাথাব্যথার কারণ হল বাতাসে ভাসমান বিপজ্জনক ধূলিকণা পিএম ১০ (১০ মাইক্রোমিটারের ছোট আকারের ভাসমান ধূলিকণা) এবং পিএম ২.৫ (২.৫ মাইক্রোমিটারের ছোট আকারের ভাসমান ধূলিকণা)-এর মাত্রাতিরিক্ত হার। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়ক, শহর জুড়ে নানা নির্মাণকাজ, কারখানার দূষণ, যানবাহনের দূষণ ইত্যাদি কারণে বাতাসে ধূলিকণার হার বরাবর বেশি দুর্গাপুরে। এর ফলে ফুসফুস, হৃদযন্ত্রের রোগী এবং বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
এই পরিস্থিতির জন্য পর্ষদের নজরদারির অভাবকেও দায়ী করছেন নাগরিকদের অনেকে। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে পর্ষদের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘নিয়মিত সব জায়গায় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। তবে নজরদারি চলে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দু’টি কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনটি কারখানাকে সতর্ক করা হয়েছে।” পুরসভার প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগের। গত বছর নানা চেষ্টার পরে দূষণ প্রায় ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছিল। পিচ রাস্তা নির্মাণ, আবর্জনা, জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, কারখানার দূষণ-সহ নানা কারণে পরিস্থিতি ফের খারাপ হচ্ছে। পর্ষদ, এডিডিএ, ডিএসপি-সহ বিভিন্ন সংস্থাকে ডেকে দ্রুত বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”