পুরভোট ঘোষণার দিনেই গুসকরায় তৃণমূলের প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় খাতা খুলতে পারেননি বিরোধীরা। তবে ফল-বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছিল, পুর-এলাকা নিয়ে তৃণমূলের যথেষ্ট ভাবনার কারণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পুরনির্বাচন হতে চলেছে বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা, মেমারি, গুসকরা ও দাঁইহাটে। যদিও সব দলের দাবি, তারা ইতিমধ্যেই ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
c ভোট ঘোষণার দিনেই সিপিএম প্রার্থী ঘোষণা করে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার ও দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বও শীঘ্রই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ভোট সারতে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসনও। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলা বলেন, “পুরভোটের জন্যে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কোভিড-বিধি মেনেই নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, বর্ধমান শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডে ৩২৪টি বুথে ভোটার রয়েছেন দু’লক্ষ ৫৯ হাজার জন। কাটোয়ার ২০টি ওয়ার্ডের ৯৩টি বুথে ভোটার রয়েছেন ৭১,৭০৮ জন। কালনার ১৮টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছেন ৪৫,৬২৮ জন। মেমারিতে ১৬টি ওয়ার্ডে ৪২টি বুথে ৩৬,১২৩ জন ভোটার রয়েছেন। গুসকরায় ১৬টি ওয়ার্ডে ৩৭টি বুথে ভোটার রয়েছেন ২৯,৫২৪ জন। দাঁইহাটে ১৪টি ওয়ার্ডে ৩১টি বুথে ২০,৪১৬ জন ভোটার রয়েছেন।
গত পুর-বোর্ডে বর্ধমানের ৩৫টি ওয়ার্ডই ছিল তৃণমূলের দখলে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে অবশ্য ২১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বিধানসভা ভোটে তৃণমূল তুলনামূলক ভাল ফল করেও ১৭টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকে। তবে শুধু পুর-এলাকা নিয়ে গঠিত বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থী খোকন দাস ৮,১০৫ ভোটে জিতেছিলেন।
কাটোয়া পুরসভায় শেষ ভোট হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভোটে ‘বোমা-গুলি’র অভিযোগ ওঠে সে বার। এক তৃণমূল কর্মী নিহত হন। ‘রক্তাক্ত’ ভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূল ১০টি করে আসন পেয়েছিল। পরে, কংগ্রেসের ১০ জন তৃণমূলের যোগ দেন।
তৃণমূলের দাবি, গত বিধানসভা ভোটে কাটোয়া শহরে মাত্র ৪২ ভোটে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলে কাটোয়া পুরএলাকায় ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে তারা ১১টিতেই এগিয়ে। তবে দাঁইহাট শহরে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ন’টিতে পিছিয়ে রয়েছে।
বিধানসভা ভোটের নিরিখে কালনা শহরেও ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ১০টিতে পিছিয়ে রয়েছে। গুসকরা শহরেও ওয়ার্ডভিত্তিক ফলে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। মোট ভোটেও গুসকরা শহরে বিজেপি ২,৩৭৭ ভোটে এগিয়ে আছে।
জেলার ছ’টি পুরসভার মধ্যে তৃণমূলকে স্বস্তি দিয়েছে শুধু মেমারি। সেখানে গত বিধানসভা ভোটে ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ১৩টিতেই এগিয়ে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মেমারি পুর-এলাকাতেও তৃণমূল ৫,২৩৪ ভোটে এগিয়েছিল।
পুরসভাগুলি দখলে রাখতে অনেক শহরেই দেওয়াল লেখা, প্রস্ততি বৈঠক, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে রাজ্য সরকারের কাজের প্রচার আগেই শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, আজ, শুক্রবার দলের ওয়েবসাইটে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে। জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। সব দল ভোটে দাঁড়াবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জন্য সব পুরসভাতেই তৃণমূল জিতবে।’’
পুর-এলাকায় ভোট পরিচালনার কমিটি গঠন করে বর্ধমানের বিজেপি নেতৃত্ব এ দিন রাতে পুরভোট নিয়ে বৈঠক করেন। বর্ধমানের প্রতিটি ওয়ার্ডে এক জন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এ দিনই দাঁইহাট ও কাটোয়া পুরসভারও নির্বাচনী কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।’’
কালনায় এ দিন দলীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার তিনটি পুরসভায় আমাদের প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়ে রয়েছে। দ্রুত তা প্রকাশ করা হবে।’’
সিপিএম এ দিন ছ’টি পুরসভাতেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। দেওয়াল লিখন থেকে বাড়ি-বাড়ি প্রচার শুরু করে দিয়েছে। দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা মেমারির বাসিন্দা সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা পুরভোটকে সামনে রেখে মিছিল করেছি। এখন দেওয়াল লিখন চলছে। কোভিড-বিধি মেনে বাড়ি-বাড়ি প্রচারও শুরু হয়েছে।’’
মেমারিতে সর্বদল বৈঠক করে প্রশাসন। মেমারি থানা মোটরবাইক ও হেঁটে টহল দেওয়া শুরু করেছে।