চোলাই-ঠেক বন্ধের দাবি করায় ‘মার’ 

শুক্রবার দুপুরে আবগারি দফতরের কর্মীরা ওই গ্রামে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানতে চান, অভিযান চলছে, অথচ চোলাইয়ের ভাটি বন্ধ হচ্ছে না কেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪২
Share:

পুলিশের অভিযান। নিজস্ব চিত্র

চোলাইয়ের ভাটি বন্ধ হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন তুলে আবগারি দফতরের কর্মীদের ঘেরাও করেছিলেন বর্ধমান ২ ব্লকের নবস্থা ২ পঞ্চায়েতের ভৈটা গ্রামের একাংশ বাসিন্দা। তাতেও কাজ হয়নি। শনিবার সকালে গ্রামের ১২টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা চোলাই কারবারিদের বাড়ি গিয়ে ঠেক বন্ধ করার আবেদন জানালে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে মেমারি থানার পুলিশ গিয়ে প্রায় ৩৫টি ভাটি ভাঙচুর করে। হাজার লিটারের বেশি চোলাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, দাবি পুলিশের।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভৈটা গ্রামের দাসপাড়া ও জনজাতিভুক্ত এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে চোলাইয়ের ভাটি রয়েছে। প্রায় ৪০টি বাড়িতে প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার চোলাই তৈরি হয়। সকালে মোটরবাইকে তা পাচার হয়ে যায় তৈকর-মোষগড়িয়া, দেবীপুর, জামালপুর, রায়না, গুসকরার নানা এলাকায়। এ ছাড়াও দিনভর ওই সব বাড়িতে চোলাইয়ের ঠেক চলে। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাশের পুতুণ্ডা গ্রামের এক যুবক চোলাইয়ের ঠেক চালানোর জন্য নিয়মিত ভাবে কারবারিদের টাকা জোগান।

শুক্রবার দুপুরে আবগারি দফতরের কর্মীরা ওই গ্রামে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানতে চান, অভিযান চলছে, অথচ চোলাইয়ের ভাটি বন্ধ হচ্ছে না কেন। তাঁদের দাবি, চোলাই কারবারিদের দৌরাত্ম্যে দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আবগারি দফতরের কর্মীদের ঘেরাও করে গাড়ি আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। পরে চোলাই কারবারিদের একাংশ পঞ্চায়েত সদস্য ঝুমা ঘোষের বাড়ি ‘ঘেরাও’ করে রাখে। দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ চলে। মেমারি থানার পুলিশ এসে ঘেরাও তোলে।

Advertisement

গ্রামবাসীরা জানান, রাতেই ১২টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বৈঠক করেন। ঠিক হয়, নিজেদের পরিবারের স্বার্থে ও গ্রামের মানুষজনের জন্য চোলাই কারবার বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ করবেন তাঁরা। এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রায় দেড়শোজন মহিলা জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করেন। চোলাইয়ের ঠেকে, কারবারিদের বাড়ি গিয়েও আবেদন জানানো হয়। ওই দলে থাকা চম্পা সাঁতরা, মালতী বাগদের অভিযোগ, “কথা বলতে গেলেই আমাদের উপরে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। মারধর করা হয়।’’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী পুষ্প দলুই, পুতুল দুর্লভদের দাবি, “মদ খেয়ে বাড়ির ছেলেরা ঝামেলা পাকাচ্ছে। প্রতিদিন অশান্তি হচ্ছে। ঘরে টাকা থাকছে না। সে জন্যই একজোট হয়েছি আমরা।’’

অশান্তির খবর পেয়ে গ্রামে যায় পুলিশ। একের পর এক ভাটিতে অভিযান চলে। মাটির তলা, উনুনের ভিতর থেকে চোলাই ও চোলাইয়ের উপকরণ বার করে নষ্ট করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামে ঢোকার খবর পেতেই চোলাই কারবারিরা পালিয়ে যায়। ওই দু’টি পাড়ায় কোনও লোকই ছিলেন না। মেমারির ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানান, ভৈটা গ্রামে চোলাই বন্ধ করার জন্য ক্রমাগত অভিযান চালানো হবে।

পঞ্চায়েত সদস্য ঝুমা ঘোষের দাবি, “কয়েক দিনের মধ্যে চোলাইয়ের কারবার বন্ধ না হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা নিজেরাই ভাটি ভাঙবেন। জেলা প্রশাসনকেও সমস্যার কথা জানানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement