Murder

Arrest: অসীম খুনে ধৃত ‘দলের’ই দু’জন

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় তৃণমূলের অঞ্চল সহ-সভাপতি বলে পরিচিত সাবুলকে দেখা যেত অসীমবাবুর সঙ্গেই।  দু’জনে বিধানসভা ভোটেও এক সঙ্গে কাজ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২১ ০৬:৩০
Share:

উপরে, মঙ্গলকোটের সিউর গ্রামের কাছে খুনের ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন ফরেন্সিক ও ব্যালিস্টিক দলের সদস্যেরা। নীচে, ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি খুনের ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ধৃতেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। তবে তৃণমূলের এলাকার নেতারা এক জনকে ‘দলের লোক’ মানলেও, অন্য জনের বিজেপি-যোগের দাবি করেছেন। গোড়া থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুললেও, বুধবার বিকেলে নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জানিয়েছিলেন, অপরাধীরা যে দলেরই হোক, ছাড়া পাবে না। তিন দিনের মধ্যে আততায়ীদের গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি। ঘটনাচক্রে, সে রাতেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ধৃত সাবুল শেখ লাখুরিয়ার কল্যাণপুর ও সামু শেখ কোটালঘোষের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার ধৃতদের কাটোয়া আদালতে তোলা হলে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘মঙ্গলকোটে খুনের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তে এগোনো হবে।’’ এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যান ফরেন্সিক ও ব্যালিস্টিক দলের সদস্যেরা।

সোমবার সন্ধ্যায় মোটরবাইকে সিউর গ্রামের বাড়িতে ফেরার সময়ে গুলিতে খুন হন লাখুরিয়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি অসীম দাস (৪৯)। তাঁর ছেলে সুনন্দ দাস পুলিশের কাছে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও, সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে পরিজনেরা দাবি করেছিলেন, ‘দলেরই চেনা লোক’ এই ঘটনায় যুক্ত বলে তাঁদের সন্দেহ। পুলিশের দাবি, বিভিন্ন সূত্র ধরে ও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই দু’জনের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয় তারা। ধৃতেরা তাঁদের কাছে জেরায় অপরাধ স্বীকার করেছেন বলেও তদন্তকারীদের দাবি।

Advertisement

চার জনের ফরেন্সিক ও ব্যালিস্টিক দল এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে তারা। ফরেন্সিক দলের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট চিত্রাক্ষ সরকার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। নমুনা সংগ্রহ করেছি। সব কিছু খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হবে।’’ ঘটনাস্থল থেকে ফিরে মঙ্গলকোট থানায় পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের সঙ্গে তাঁরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধেই মঙ্গলকোট থানায় ২০১৬-২০১৮ সালের মধ্যে আটটি করে অভিযোগ রয়েছে। সামু শেখ মাদক পাচারের অভিযোগে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। মাসখানেক আগে ছাড়া পেয়ে গ্রামে ফেরেন। এ দিন আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ রাজনীতির বিবাদেই এই খুন। ধৃতেরা তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, কাশেমনগর বাজার থেকে অসীমবাবু সে দিন মোটরবাইক নিয়ে বেরনোর পরেই তাঁদের কাছে খবর চলে আসে। সিউর-লাখুরিয়া পিচ রাস্তায় কালভার্টের কাছে পৌঁছতেই তাঁকে দাঁড় করানো হয়। মোটরবাইক দাঁড় করাতেই তাঁকে অতর্কিতে কাছ থেকে গুলি করা হয়। পুলিশের দাবি, ওই দু’জন ছাড়াও, ঘটনায় আরও অনেকের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় ও তৃণমূলের নানা সূত্রের দাবি, ২০১৬ সালের পর থেকেই অসীমবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত ছিলেন সামু শেখ-সহ কয়েকজন। সেই সময়ে খতিয়ারে অসীমবাবুর উপরে হামলা বা তার পরে বাড়িতে হামলার ঘটনায় তাঁদের যোগের কথা জানা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় তৃণমূলের অঞ্চল সহ-সভাপতি বলে পরিচিত সাবুলকে দেখা যেত অসীমবাবুর সঙ্গেই। দু’জনে বিধানসভা ভোটেও এক সঙ্গে কাজ করেছেন।

তৃণমূলের নানা সূত্রের দাবি, বিধানসভা ভোটে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় পাশের অঞ্চলের সভাপতিকে সরিয়ে দেয় দলীয় নেতৃত্ব। লাখুরিয়া অঞ্চলে দল এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান খুব বেশি ছিল না। সে জন্য অসীমবাবুকে সরানোর দাবিও ওঠে। সভাপতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সাবুল ও অসীমবাবুর পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। কৈচরে দলের ব্লক অফিসে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও হয়। সেখানে থাকা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘কাঁচা টাকার হদিস পেতে কখন যে কে কোথায়, বোঝা মুশকিল! তা না হলে কি অসীম-শাবুলের বিরোধ, শাবুল-সামু এক হওয়ার ঘটনা ঘটে!’’

কাটোয়া আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃত দু’জনকে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলকোটে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অনুব্রতের এ দিন প্রতিক্রিয়া, ‘‘কে, কবে ঘি খেয়েছে, সে জন্য দলের লোককে খুন করবে, এটা হয় না কি? যে দলের লোকই হোক না কেন, অপরাধীদের শাস্তি হবে, এটাই চাই।’’ মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর দাবি, ‘‘শাবুল দলের কোনও পদাধিকারী নন। সমর্থক হতে পারেন। ধৃত সামুর সঙ্গে বিজেপির যোগ রয়েছে।’’ বিজেপির জেলা (কাটোয়া) সহ-সভাপতি রানাপ্রতাপ গোস্বামীর দাবি, ‘‘আমরা ঘটনার প্রথম দিন থেকেই বলছি, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই এই খুন। পুলিশের গ্রেফতারে সবই পরিষ্কার হয়ে গেল। তৃণমূল নেতাদের মুখ লুকনোর জায়গা নেই বলে বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বাঁচতে চাইছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement