উৎকণ্ঠা: পাড়ার সকলেই উদ্বেগে। ছবি: পাপন চৌধুরী
এলাকার আলডিহি, বেজডিহি-সহ বেশ কিছু জায়গায় কয়লার অবৈধ কুয়ো খাদানের রমরমা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে কুলটির নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের একাংশ, ইসিএল কর্তৃপক্ষ, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ এমনই। তবে পুলিশের দাবি, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও আলডিহিতে কী ভাবে তিন জনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
আকনবাগানের তিন যুবক যেখানে নিখোঁজ হন, তা বিজলিঘর রাস্তা লাগোয়া এলাকায়। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী, বিজেপি নেতা সুব্রত মিশ্রদের দাবি, ওই রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে দু’পাশে জঙ্গল ঘেরা মাঠে একাধিক অবৈধ কুয়ো খাদান চোখে পড়বে। খাদানগুলি থেকে যে ‘নিয়মিত’ কয়লা তোলা হচ্ছে, তা-ও খালি চোখেই বোঝা যায়। বংশগোপালবাবুদের বক্তব্য, ‘‘তিন যুবকের নিখোঁজের ঘটনা বলে দিচ্ছে, এলাকায় রমরমিয়ে চলে অবৈধ খাদান।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই এলাকাতেই ২০১১-য় অবৈধ খাদান চলার সময়ে তিন জন নিখোঁজ হয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত তাঁদের খোঁজ মেলেনি। সিপিএম নেতা বংশগোপালবাবুর অভিযোগ, ‘‘অবৈধ খাদান এখনই বন্ধ না হলে এলাকার মানুষের জীবন এ ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়বে। শাসক দল এ বিষয়ে দায়িত্ব এড়াচ্ছে।’’ বিজেপি নেতা সুব্রতবাবুর অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের লোকেরা কয়লা মাফিয়াদের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নিয়ে পুলিশ, প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে।’’
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা অবৈধ কয়লা খাদানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব। অবৈধ কয়লা খাদানের রমরমা তো সিপিএম আমলে শুরু হয়েছিল।’’ পুরসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নেপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘এমন অবৈধ খাদান বন্ধ করার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা জানান, অবৈধ খাদানের অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ করা হয়। অভিযানও চলে। তবে ‘ব্যবস্থা’ কতখানি নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতারাও। সাবেক কুলটি পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা বাচ্চু রায়ের অভিযোগ, ‘‘আলডিহি, বেজডিহির বিস্তীর্ণ এলাকায় এমন অবৈধ খাদানে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। বহু বার পুলিশ ও ইসিএল-কে পদক্ষেপ করার জন্য আর্জি জানিয়েছি। লাভ হয়নি।’’
যদিও ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের বক্তব্য, ‘‘ভূগর্ভস্থ কয়লা ইসিএলের ঠিকই। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের জমি সংস্থার নয়। ফলে, এত বড় এলাকা ইসিএলের পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা খবর পেলে পুলিশকে জানাই।’’
ইসিএলের এক কর্তার মতে, খনিতে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড শনাক্ত করার জন্য সংস্থার কাছে আধুনিক যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু তা স্বাভাবিক ভাবেই থাকে না অবৈধ খাদানে কাজ করা শ্রমিকদের। ওই কর্তার অনুমান, ‘‘সাধারণ ভাবে, জলন্ত লম্ফ নিয়ে খনিতে নামলে তা নিভে গেলে বুঝতে হবে, সেখানে বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে। রবিবার সম্ভবত খননকারীরা তেমন কোনও পদক্ষেপ করেননি। তাই বিপত্তি ঘটেছে।’’