—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পাঁচের দশকে গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল, ‘পুলিশ তুমি যতই মারো, মাইনে তোমার একশো বারো’। এখন আর জি কর কাণ্ডের পরে ফের পুলিশের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে ছড়াচ্ছে ক্ষোভ। পোস্ট করা হচ্ছে, ‘পুলিশ তুমি যতই মারো, তোমার মেয়ে হচ্ছে বড়’ কিংবা ‘পুলিশ তুমি চিন্তা করো, তোমার মেয়েও হচ্ছে বড়’। পুলিশ আধিকারিক থেকে নিচুতলার কর্মীরাও ওই সব পোস্ট দেখে চুপ করে বসে নেই। পাল্টা পোস্টে তাঁদের দাবি, ‘পুলিশের মেয়ের চিন্তা ছাড়, সে লড়াই করেই হচ্ছে বড়’।
নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের একাংশের দাবি, আর জি কর কাণ্ডে পুলিশের গাফিলতি পাওয়া গেলে বা সেই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে কোনও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকলে নির্দিষ্ট করে অভিযোগ জানানো উচিত। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে পুরো পুলিশ-পরিবারকে দোষী করা উচিত নয়। তাঁদের ক্ষোভ, কয়েক জনের জন্যই এই ধরনের পোস্ট করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সেই দায় তাঁদেরও নিতে হচ্ছে। ওই অংশের পুলিশের দাবি, যে লেখা পোস্ট করা হচ্ছে, তা এক ধরনের হুমকি। কিন্তু সবার বিরুদ্ধে তো আর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই প্রতিবাদ জানাতে পাল্টা সমাজমাধ্যমই ব্যবহার করছেন তাঁরা।
তবে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, অপরাধ কেউ সমর্থন করে না, কিন্তু আইন-রক্ষার সঙ্গে যুক্তদের পরিবার, শিশুকন্যাকে নিয়ে এ ভাবে মন্তব্য করা কী উচিত। তাহলে যে নারী নিরাপত্তাহীনতা, পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিবাদ করা হচ্ছে, তারই অঙ্গ হয়ে যেতে হয়। নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের দাবি, যাঁরা ওই সব পোস্ট করছেন, তাঁদের বিপদে পুলিশই
পাশে থাকবে।
জেলার এক পুলিশ কর্মীর কথায়, “আমারও মেয়ে রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা মানসিক ভাবে প্রভাব ফেলেছে। পুলিশকে ঘিরে নানা রকম পোস্ট, ঘরে-বাইরে আলোচনায় একা বোধ করছি। অন্যের দোষের দায়
নিতে হচ্ছে।’’
জেলা পুলিশের এক ইনস্পেক্টরের কথায়, “আমরাও সামাজিক মানুষ। পরিবার আছে, বন্ধু আছে। আড্ডা আছে। সমাজমাধ্যমে পুলিশের সম্পর্কে কটূক্তি, ক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছি। অথচ নবান্ন অভিযানে আমাদের ৩৬ জন পুলিশ জখম হয়েছে। আমরা কোথায় ক্ষোভ দেখাব, কোথায় কর্মবিরতি করব?’’ এক এসআই বলেন, “আর জি কর কাণ্ডে কলকাতা পুলিশ কোনও ভুল তদন্ত করেনি। সেই কারণে সিবিআইও নতুন কিছু বার করতে পারছে না। অথচ সমাজমাধ্যমে ভুল প্রচার করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদ তো করতেই হবে।”
‘রাত দখলে’ যোগদানকারী মহিলাদের একাংশ জানান, বিচারের দাবি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যাওয়া কাম্য নয়। উস্কানিমূলক মন্তব্য, ছোটদের টেনে আনা থেকে বিরত থাকতে হবে। আবার পুলিশ বা সরকার ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে বলেও এই ধরনের পোস্ট হচ্ছে মনে করছেন অনেকে।