জলস্তর হু হু করে নামতে শুরু করেছে কালনা মহকুমার মন্তেশ্বরে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে এলাকার বেশ কিছু নলকূপ। এই পরিস্থিতিতে চাষের জন্য যাতে গভীর নলকূপের অনুমতি দেওয়া না হয়, তা নিয়ে সরব হয়েছেন এলাকার মানুষ।
সুইডের তালিকায় মন্তেশ্বর ‘ব্লক-গ্রে’ জোন হিসাবে চিহ্নিত। সম্প্রতি জেলাশাসক, দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদ, জেলা বিদ্যুৎ দফতর-সহ বেশ কিছু সরকারি দফতরে চিঠি পাঠিয়ে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জলস্তর প্রায় ৩০ ফুট নেমে গিয়েছে। ফলে পঞ্চায়েতের ও বেসরকারি নলকূপগুলি বহু জায়গায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্প থাকলেও বাড়ি বাড়ি পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এ দিকে, বুধবার থেকে এলাকার বড় উৎসব চামুণ্ডা পুজো শুরু হওয়ায় বাড়ি-বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনেদের ভিড়। ফলে অনেককেই লাইন দিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরির রাস্তার সংযোগ থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
লিখিত চিঠিতে বাসিন্দারা জানান, বোরো চাষের জন্য ব্লকে সাময়িক ভাবে ১৩৬টি অগভীর নলকূপ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ওই নলকূপের মালিকেরা চেষ্টা করছেন সেগুলি দীর্ঘস্থায়ী ভাবে চালানোর। কিন্তু তা হলে ভবিষ্যতে পানীয় জলের সঙ্কট ভয়াবহ আকার নেবে। এক বাসিন্দা বানীব্রত চৌধুরী জানান, মাটির তলা থেকে অতিরিক্ত জল তুলে নেওয়ায় আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। উল্লেখ্য, এই ব্লক ঘেঁষা পূর্বস্থলী ১ এবং ২ ব্লকে বেশিরভাগ পঞ্চায়েত এলাকার মাটির তলার জলে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। মন্তেশ্বরের বাসিন্দা মিঠুন অধিকারী, বিশ্বজিৎ গড়াই, দেবু গড়াইদের দাবি, দ্রুত নামছে জলস্তর। ফলে অকেজো নলকূপের সংখ্যা বাড়ছে, পানীয় জল পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
মন্তেশ্বরে দ্রুত জলস্তর নামার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত বোরো ধানের চাষকেই দায়ী করছে কৃষি দফতর। প্রচুর জল লাগে এই চাষে এবং দীর্ঘদিন ধরে তা তোলা হচ্ছে মাটির তলা থেকে। এ দিকে কমছে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, মন্তেশ্বর ‘ব্লক-গ্রে’ জোন হিসাবে চিহ্নিত। তাই মাটি তলার বদলে মাটির উপরের জলকে ধরে চাষের কাজে লাগানো প্রয়োজন।
এলাকায় গভীর নলকূপের অনুমতি প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তড়িৎ রায় বলেন গত আট বছর ধরে গুছপ্রকল্পে ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকার কিছু বাসিন্দা গভীর নলকূপ থেকে জল তুলে চাষের আবেদন করেছেন। তা মঞ্জুর হয়নি। তিনি জানান, মাটির তলার জল যাতে বেশি তোলা না হয়, সে জন্য ১০০ দিনের প্রকল্পে বহু পুকুর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানকার জল মাছ চাষের পাশাপাশি চাষের কাজেও লাগানো যায়।