মাধবডিহি থানার সামনে রাখা বাইক দেখতে আসছেন অনেকেই। নিজস্ব চিত্র
যেন মেলা বসেছে।
দড়ি দিয়ে ঘেরা জায়গায় সার দিয়ে রাখা আছে মোটরবাইক। সেখানে উৎসুক মানুষজনের ভিড়। চোখ ঘোরাফেরা করছে বাইকগুলির উপরে। এক সময়ে কারও মুখে খেলে যাচ্ছে হাসি। কেউ-কেউ আবার সব ক’টিতে চোখ বোলানোর পরে বিরস মুখে বেরিয়ে যাচ্ছেন। দিনভর চলছে এই রকম মানুষজনের আনাগোনা। তা নজরে রাখার জন্য রীতিমতো সিসি ক্যামেরার বন্দোবস্ত করতে হয়েছে মাধবডিহি থানার পুলিশকে। রাখতে হয়েছে দু’জন পাহারাদারও।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাধবডিহির কুমারপুরের বাসিন্দা শেখ জাহিরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি চুরি যাওয়া মোটরবাইকের সন্ধান করছিল। সেই সূত্র ধরে হাতে আসে ২৮টি মোটরবাইক। ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৬ জানুয়ারি ওই ঘটনার সূত্র ধরে এগিয়ে আরও ১৯টি মোটরবাইকের খোঁজ মেলে। হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থেকে উদ্ধার হয় সেগুলি। গ্রেফতার হয় আরও তিন জন।
থানার সামনে একচিলতে ফাঁকা জায়গায় রাখা আছে নানা সংস্থার বিভিন্ন মডেলের মোটরবাইকগুলি। তার মধ্যে নিজের খোয়া যাওয়া বাইকটি রয়েছে কি না, তা দেখতেই হুগলি-বাঁকুড়া সীমানা ঘেঁষা পূর্ব বর্ধমানের ওই থানায় ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। থানার আধিকারিক সুব্রত বেরা জানান, হুগলি ও বাঁকুড়া থেকেই বেশি লোক আসছেন। তাঁদের জানানো হচ্ছে, নথিপত্র জমা দিয়ে আদালতের নির্দেশ পেলে মোটরবাইক মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, মূলত জনবহুল নয় বা লোকজন কম যাতায়াত করে এমন জায়গা থেকেই মোটরবাইক চুরি করার প্রবণতা রয়েছে ধৃতদের মধ্যে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম বলেন, “মোটরবাইকগুলি চুরি করে গ্যারাজে রাখা হত। তার পরে অনেক কম টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল।’’
পুলিশ জানায়, বাইক উদ্ধারের কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে। তার পরেই সপ্তাহ দুয়েক ধরে থানার সামনে মোটরবাইক দেখার ভিড় বেড়ে চলেছে। রবিবার দুপুরে হুগলির গোঘাট, আরামবাগ, বাঁকুড়ার কোতলপুর, পাত্রসায়র থেকে বেশ কয়েকজন এসেছিলেন। হুগলির গোঘাটের সঞ্জয় সাহা মোটরবাইক দেখে বেরনোর সময়ে বলেন, ‘‘গত বছর পুজোর সময়ে আমার বাইক চুরি হয়ে যায়। নম্বরহীন একটি বাইক দেখে মনে হল, সেটি আমারই। নথিপত্র নিয়ে আবার আসব।’’ কয়েকজন অবশ্য বারবার খুঁজেও হারানো মোটরবাইক দেখতে না পেয়ে গোমড়া মুখে বাড়ির পথ ধরেন। কয়েকজন তখনও নিজের চেনা বাইকটির খোঁজ করে চলেছেন।