—প্রতীকী চিত্র।
গত তিন বছরের তুলনায় চলতি বছরে পশ্চিম বর্ধমানে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তামাক সেবন। বেড়েছে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রিও। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি। সে তথ্য জেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। প্রশাসনের কর্তারাও স্বীকার করেছেন, এই সমীক্ষার ফল অত্যন্ত উদ্বেগের।
সম্প্রতি আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে। সেখানে তামাক সেবনের কুপ্রভাব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন বিশেষজ্ঞেরা। সভায় সমীক্ষার ফল তুলে ধরেন তামাক-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০১৬-য় জেলায় ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৬৭ জন তামাক সেবন করতেন। ২০১৯-এ তা বেড়ে হয়েছে ১৫ লক্ষ ৬০ হাজার ৫৬৯ জন। এই বৃদ্ধির ১০ হাজার জন ধূমপায়ী এবং এক লক্ষের বেশি কিছু গুটখা, খৈনি-সহ অন্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারী। পাশাপাশি, সংগঠনটির দাবি, চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪৪ কোটি টাকার সিগারেট, বিড়ি বিক্রি হয়েছে। নানা তামাকজাত সামগ্রী বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকার। নির্মাল্যবাবু বলেন, ‘‘সমীক্ষার ফল প্রশাসনের কাছে জানিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আর্জি জানানো হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এই বৃদ্ধির কথা অনেক আগে থেকেই তাঁদের নজরে রয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই গত ২৭ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বর্ধমানকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধূমপানমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠি বলেন, ‘‘জেলায় ডিস্ট্রিক্ট লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি তৈরি করে তামাক সেবনের কুফল বোঝাতে ধারাবাহিক প্রচার অভিযান চলছে। সুফলও মিলছে।’’
আশঙ্কার তথ্য
সংগঠনটির সমীক্ষার ফল উদ্বেগের জানিয়ে ডিস্ট্রিক্ট লেবেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির নোডাল অফিসার তথা জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ অনুরাধা দেব বলেন, ‘‘আগামী দু’-এক বছরে হয়তো এই হার আরও বাড়বে। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ধারাবাহিক সচেতনতা প্রচার শুরু হওয়ায় সুফলও মিলবে।’’ উদ্বেগ কাটাতে নানা পদক্ষেপও করা হয়েছে বলে দাবি অনুরাধাদেবীর। তিনি জানান, পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে প্রকাশ্যে গুটখা ও তামাকজাত সামগ্রী বিক্রিতে রাশ টানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের কর্তাদেরও নিজেদের গণ্ডীর মধ্যে সচেতনতা প্রচার অভিযান চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, রাজ্য সরকারের নির্দেশে ইতিমধ্যেই শহরে গুটখা বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। ধূমপানমুক্ত অঞ্চলে অবস্থিত কোনও দোকানে তামাকজাত সামগ্রী বিক্রির নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পরেও ধূমপায়ীদের সম্বিত ফেরে কি না, সেটাই দেখার।