বৃষ্টির পরে শুরু হয়েছে ধান চাষের কাজ। কাটোয়ার চুড়পুনিতে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারী বৃষ্টি ও বিভিন্ন নদী উপচে পড়ায় ডুবে গিয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের নানা এলাকার চাষের জমি। এখনও অনেক জমিতে জল জমে রয়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে চাষে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করল জেলা কৃষি দফতর। পূর্ব বর্ধমানে কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তবে জল জমি থেকে নেমে যাওয়ার পরে বোঝা যাবে, ঠিক কতটা
ক্ষতি হয়েছে।’’
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, কোন ব্লকে কোন চাষ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার তালিকা চেয়ে পাঠানো হয় ব্লক কৃষি আধিকারিকদের (এডিও) কাছে। সোমবার দুপুরে সে সব রিপোর্ট জমা পড়ে। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৪০টি পঞ্চায়েত এলাকায় ১,০৮৩টি মৌজায় চাষের ক্ষতি হয়েছে। সেগুলিতে ১,৫৬,৬৫৭ হেক্টর আমন চাষের এলাকায় জমা জলে ক্ষতি হয়েছে ৬৭,৮০২ হেক্টরে। ক্ষতির মুখে পড়েছে কাটোয়া ২ ব্লকের প্রায় ২৫০ হেক্টর করে পাট ও আনাজের জমি।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জামালপুর ব্লকে ১৩টি, মেমারি ১ ব্লকে ১১টি, বর্ধমান ১ ও ২, গলসি ১ ও ২, মেমারি ২ ব্লকে ৯টি করে পঞ্চায়েতে চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষি আধিকারিকদের দাবি, রিপোর্ট তৈরি হয়েছে ২৭-২৯ জুলাই ভারী বৃষ্টি এবং বিভিন্ন নদীর উপচে পড়া জলে ক্ষতি দেখে। আধিকারিকদের অনেকের পর্যবেক্ষণ, বৃষ্টির থেকেও ধান চাষে বেশি ক্ষতি করেছে খড়ি, বাঁকার মতো বিভিন্ন নদীর উপচে পড়া জল। জেলার অন্যতম সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘বেশি দিন ধানের চারা জলের তলায় থাকলে, তা পচে নষ্ট হবে। আর কিছু দিন না গেলে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পরিষ্কার হবে না।’’ তিনি জানান, জল জমা মাঠে পাট গাছ যাঁরা কেটে ফেলেছেন, সে চাষিরা সুবিধা পাবেন। কারণ, তাঁদের পাট পচানোর জন্য জলাশয় খুঁজতে হবে না। জমিতেই জমা জলে পাট পচাতে পারবেন তাঁরা। কৃষি আধিকারিকদের অনেকেরই দাবি, অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন ধানের চারা পোঁতার কাজ করা যায়। সে ক্ষেত্রে, জমিতে আমনের চারা পচে গেলেও চাষিরা সেখানে আবার নতুন করে চাষ করতে পারবেন।
এরই মধ্যে সোমবার দুপুর থেকে ফের আকাশে কালো মেঘ জমে। বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিও নামে। আনাজ চাষিরা জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পটল, ঝিঙে, বরবটি, করলা-সহ নানা আনাজের ফলন কমেছে। পূর্বস্থলীর চাষি ব্রহ্মানন্দ মালিক, বসির শেখদের দাবি, ‘‘মেঘ কেটে রোদ উঠলে গোড়াপচা রোগের হামলা দেখা দেবে বলে মনে করছি। ফলে, জমিতে বহু আনাজ গাছ নষ্ট হবে।’’ পূর্বস্থলী ২ ব্লক কৃষি আধিকারিক জনার্দন ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘আনাজের জমিতে ছত্রাকজনিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাবের মতো পরিস্থিতি রয়েছে। চাষিদের সতর্ক থাকতে হবে।’’