প্রতীকী ছবি।
জাতীয় সড়কে নগদের বদলে কার্ডে টোল নেওয়া শুরু হচ্ছে রবিবার থেকে। কিন্তু রবিবার থেকে সব গাড়িই কার্ডের মাধ্যমে টোল দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট সব মহল।
এই ব্যবস্থায় গাড়ির চালকদের ‘চিপ’ দেওয়া কার্ড কিনতে হবে। তা লাগানো থাকবে গাড়িতে। গাড়ি ধীরে চললেই চিপের কোড চিহ্নিত করবে ‘সেন্সর’। তার পরেই টোলের টাকা কাটা হবে। খুলে যাবে গেটও। সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক বা চালকের মোবাইলে যাবতীয় তথ্যের এসএমএস পৌঁছে যাবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ব্যবস্থায় লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি থেকে বাঁচা যাবে। বাঁচবে সময় ও গাড়ির জ্বালানিও। গ্রাহকেরা বাড়তি ২.৫ শতাংশ টাকা ছাড়ও পাবেন।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। ২০১৬ থেকে পালসিট ও ডানকুনি টোলপ্লাজ়ায় দু’টি করে গেটে ‘সেন্সর’ বসানো ছিল। এ ছাড়া, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ‘হ্যান্ডেল’ ব্যবহার করা হত। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি বলেই জানা যায়।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে যত গাড়ি যায় তার ২৭ শতাংশ গাড়িতে ‘চিপ’ লাগানো সম্ভব হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা বেড়ে আনুমানিক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প অধিকর্তা (পিডি) স্বপনকুমার মল্লিক বলেন, “কার্ড কিনে তবেই টোলপ্লাজ়া পেরোতে পারবে গাড়িগুলি। সে জন্য এক-একটি লেনে ছ’টি করে গেটের মধ্যে চারটিতে ‘সেন্সর’ লাগানো হয়েছে। একটি গেট দিয়ে ভিআইপি গাড়ি যাবে। কোনও কারণে যানজট হলে আর একটি গেট ব্যবহার করা হবে। সেখানে নগদে টোল নেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে।’’ তবে চিপ লাগানো গাড়ি সে লাইনে ঢুকলে চালককে দ্বিগুণ টোল দিতে হবে। অথবা চিপ ছাড়া গাড়ি অন্য লেনে ঢুকলে সে ক্ষেত্রেও চালককে দ্বিগুণ টোল দিতে হবে।
কিন্তু চালকদের অভিযোগ, ওই চিপ লাগানো কার্ড টোলপ্লাজ়া ও ব্যাঙ্ক থেকে নিতে গেলে খরচ যথাক্রমে একশো ও ছ’শো টাকা। আবার টোলপ্লাজা থেকে সে কার্ড মিলছেও না বলে অভিযোগ। স্বপনবাবুও স্বীকার করেন, ‘‘চিপ লাগানো কার্ড সরবরাহে একটু সমস্যা হচ্ছে।’’ ব্যাঙ্কে বেশি খরচের প্রসঙ্গে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, মোট ২২টি ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি কার্ডের দাম, জমা, টোলের টাকা বাবদ যথাক্রমে একশো, তিনশো ও দু’শো টাকা নিচ্ছে।
পাশাপাশি, প্রথম দিকে এই ব্যবস্থায় টোলপ্লাজ়ায় ব্যাপক যানজটের আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী, পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বৈঠকও করেছেন। জেলা প্রশাসন জানায়, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রচার, গেটের মাথায় গ্লো-সাইন বোর্ডের মাধ্যমে নির্দেশিকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক বলেন, “রাস্তার ধারে বিভিন্ন ধাবা, পেট্রল পাম্প, ল্যাংচার দোকান, পরিবহণ দফতর থেকেও যাতে কার্ড পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করা দরকার। বিনামূল্যে দু’হাজার কার্ড জেলা প্রশাসনকে দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।’’ পুলিশ সুপার যানজট আটকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, জেলাশাসকের প্রস্তাবমতো বেশ কিছু জায়গা থেকে যাতে চালকেরা কার্ড কিনতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া, টোলপ্লাজ়ায় ‘মার্শাল’ রাখা হচ্ছে। তাঁরাই গ্রাহকদের পরামর্শ দেবেন।