আউশগ্রামের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে ময়ূর। — নিজস্ব চিত্র।
শুধু বর্ষা নয়, শীতেও মিলবে ময়ূরের দেখা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আপনার সামনে পেখম মেলে নেচেও যেতে পারে সে। এই দৃশ্য এখন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে গেলে আকছার দেখা যাচ্ছে। আর সে কারণেই অখ্যাত হেদোগরিয়া গ্রামে রোজ ভিড় জমাচ্ছেন বহু পর্যটক।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে আউশগ্রাম সংলগ্ন পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা জঙ্গলমহলের দেউল এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি ময়ূর ছাড়া হয়েছিল। উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে ক্রমে ময়ূরের বংশবিস্তার ঘটেছে। তারা এখন আশেপাশের জঙ্গলেও ছড়িয়ে পড়েছে। আদুরিয়া জঙ্গল এলাকায় বর্তমানে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি ময়ূর রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। গত দু’বছর আগে যার সংখ্যা ছিল ৪০-৪৫টি।
আউশগ্রামের আদুরিয়া, হেদোগরিয়ায় ময়ূরের সংখ্যা এখন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই ঝাঁক ঝাঁক ময়ূর দেখতে দূর থেকে এসে ভিড় করছেন বহু পর্যটক। বোলপুরের শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘‘আমি মাঝে মধ্যেই সপরিবারে আসি আউশগ্রামের জঙ্গলে। আগে অনেক কষ্ট করে এবং অনেক সময় ধরে অপেক্ষার পর ময়ূরের দেখা মিলত। এখন সব সময়ই ময়ূরের দলের দেখা মেলে।’’ হেদোগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মনোজ রায় বলেন, ‘‘আমরা খুবই সর্তক, যাতে কোনও ভাবেই ওদের কেউ বিরক্ত না করে। বনবিভাগও খুবই সক্রিয়।’’
বর্তমানে আউশগ্রামের হেদোগরিয়া ছাড়াও প্রেমগঞ্জ, রাঙাখুলা, আদুরিয়া প্রভৃতি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় ঝাঁক ঝাঁক ময়ূর ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়েরা। এক একটি ঝাঁকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ময়ূর দেখা যায়। জঙ্গল থেকে ছেড়ে মাঝেমধ্যে পাশের মাঠগুলিতে চলে আসছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা বন আধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘আউশগ্রামের জঙ্গলে ময়ূরের সংখ্যা আগের থেকে ভালই বেড়েছে। যদিও সঠিক ভাবে গণনা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এ ছাড়া জঙ্গলে আগুন যাতে না লাগে, সে জন্য আমরা ধারাবাহিক ভাবে প্রচার চালাচ্ছি। জঙ্গলের আগুনেই ময়ূরের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। যে হেতু আগুন রোখা যাচ্ছে, তাই ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে।’’
আউশগ্রামের জঙ্গলে ইন্ডিয়ান উলফ বা হেঁরোল, খরগোশ, অজগর, বনমুরগি, বনবিড়াল, প্যাঙ্গোলিন, সজারু প্রভৃতি প্রাণীও দেখা যায়। তা ছাড়া বছর তিনেক ধরে এলাকায় পাইথনের দেখা মিলছে। ওইসব জীবজন্তুর সংখ্যাও এখন বেড়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। তবে ময়ূর এখন বাড়তি আকর্ষণ আউশগ্রামের জঙ্গলে।