—প্রতীকী চিত্র
অতিরিক্ত বালি বহন বন্ধ করা নিয়ে ইজারাদারদের সঙ্গে চাপানউতোর দেখা দিল জেলা প্রশাসনের বৈঠকে।
প্রশাসনের বক্তব্য ছিল, কোনও ভাবেই অতিরিক্ত বালিবোঝাই ট্রাক খাদানের বাইরে যাবে না। যে খাদান থেকে বারবার এমন গাড়ি বার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাল্টা এক ইজারাদার দাবি করেন, পাশের জেলাগুলিতে এক-একটি ট্রাকে ৬৬০ ঘনফুট বালি আইন মেনে রাস্তায় নামছে। এখানেই প্রশাসনের যত ‘ম্যাথাব্যথা’।
জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে গোটা রাজ্যে নির্দিষ্ট নিয়ম করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার দু’দফায় প্রায় ১৫০ জন ইজারাদারদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসন। বৈঠকে জেলাশাসক ছাড়াও অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) শশীভূষণ চৌধুরী, মহকুমাশাসকেরা, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একাধিক আধিকারিকরা হাজির ছিলেন। ঠিক হয়, বালি তোলার সরকারি নির্দেশিকা সমস্ত ঘাটে টাঙিয়ে রাখতে হবে। সেখানে ইজারাদারেরা কোনখান থেকে বালি তুলছেন, নদীর কত মিটার পর্যন্ত বালি তোলা যাবে—এ রকম তথ্যও রাখতে হবে। জেলাশাসক জানান, ওই নির্দেশিকা বালিঘাটে বা খাদান এলাকায় না থাকলে ইজারাদারকে ‘শো-কজ’ করা হবে।
এর সঙ্গেই ঠিক হয়, সেচ দফতরের কোনও বাঁধ দিয়ে বালিবোঝাই ভারী গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে না। তবে খাদান থেকে মূল রাস্তার মধ্যে বাঁধ থাকলে তা পারাপার করতে পারবে। গলসির শিকারপুর, শিল্যাঘাটের মতো বেশ কিছু জায়গায় বাঁধের উপর দিয়েই বালির ট্রাক যাতায়াত করে। জেলাশাসকের প্রস্তাব, ট্রাক্টরের মতো তুলনামূলক কম ভারী গাড়িতে বালি তুলে ইজারাদার অন্য জায়গায় মজুত করতে পারেন। সেখান থেকে তা ভারী গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হোক। আর একান্তই বাঁধের রাস্তা ব্যবহার করতে হলে সেচ দফতরের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বালি তুলতে পারবেন ইজারাদারেরা। তার পরে নয়। বালির ট্রাক যাওয়ার রাস্তায় স্কুল থাকলে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কথাও বলা হয়। সমস্ত খাদানে সিসিটিভি বসানোর কথা বলা হয়েছে। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের কথা মতো চেকপোস্টেও সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। ইজারাদারেরা প্রস্তাব দেন, বিভিন্ন আইন মোতাবেক একাধিক দফতর একটি বালির গাড়ির উপরে বারবার অভিযান চালায়। সমন্বয়ের দাবি করেন তাঁরা। প্রস্তাব মেনে নেয় প্রশাসন।
এই সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে ৭৫টি বেআইনি বালির ট্রাক আটক করে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। প্রশ্ন ওঠে, একের পরে এক ‘নিয়ম’ তৈরি করলে রাজস্ব আদায় কী কমে যাবে না! জেলাশাসক বলেন, “সামাজিক সুরক্ষা, রাস্তাঘাট রক্ষা করার জন্যই বালির ট্রাকের উপরে অভিযান চালানো হয়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’’
খণ্ডঘোষের লোদনা এলাকায় বালি তোলা নিয়ে একাধিক অভিযোগ আসায় বিশেষজ্ঞ দলকে দিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলাশাসক। গলসির শিকারপুরে আটটি বালি খাদান খোলার ব্যাপারেও যৌথ পরিদর্শনের রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বালিঘাটের ইজারাদের অন্যতম যোগেন্দ্র বর্মণ বলেন, “অনেক খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। অতিরিক্ত বালিবোঝাই গাড়ি নিয়ে কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা বৈঠকে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখা করা হয়েছে।’’ জেলা সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, “ওভারলোডিংয়ের জন্য রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে, রাস্তাও খারাপ হচ্ছে। অতিরিক্ত বালি বহন বন্ধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’’