পথ দাপাচ্ছে ‘ধু...উ...ম’

পেট্রোল মিলছে হেলমেট ছাড়া

হেলমেট না পরলে পেট্রোল পাম্প থেকে মিলবে না জ্বালানি, কেরলের তিন শহরে অগস্ট থেকে চালু হচ্ছে এই নিয়ম। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আর্জির পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনারও নির্দেশ জারি করেন, ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০০:৪১
Share:

হেলমেট নেই। তাতে অবশ্য পেট্রোল পেতে বেগ মিলছে না। রানিগঞ্জে।

হেলমেট না পরলে পেট্রোল পাম্প থেকে মিলবে না জ্বালানি, কেরলের তিন শহরে অগস্ট থেকে চালু হচ্ছে এই নিয়ম। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আর্জির পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনারও নির্দেশ জারি করেন, ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল।’ তবে বর্ধমান জেলা জুড়েই বছর দেড়েক আগে এই নিয়ম চালু হয়। কিন্তু নজরদারির অভাবে তা মানা হচ্ছে না। হেলমেট ছাড়াই অবাধে তেল নিচ্ছেন মোটরবাইক আরোহীরা। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন অবশ্য জানান, এই নিয়ম মানার জন্য ফের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে পেট্রোল পাম্পগুলিকে।

Advertisement

মাথায় হেলমেট না পরার ফলে দুর্ঘটনায় বিপদ বাড়ে অনেকেরই। কিন্তু তা সত্ত্বেও মোটরবাইক আরোহীদের অনেকেই হেলমেট পরতে অনীহা দেখান। নানা জন নানা যুক্তি দেন। মাথা ভারী হয়ে যাওয়া, ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশে কিছু দেখতে না পাওয়া, গরমে সমস্যা, পিছনের গাড়ির হর্ন শুনতে অসুবিধা থেকে মহিলাদের ক্ষেত্রে চুলের ক্ষতি— বিভিন্ন রকম দাবি করেন মোটরবাইক আরোহীরা। অথচ, প্রতি মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে গড়ে ১০ জন করে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত ভর্তি হন। হাসপাতালগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হেলমেট না পরায় ক্ষতি বেশি হয়।

পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মোটরযান আইন ১৯৮৮’-এর ১২৯ ধারা অনুযায়ী, মোটরবাইক চালানোর সময় একমাত্র শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন ছাড়া বাকি সবার জন্য হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। হেলমেট হতে হবে ‘ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ড’-এর মান অনুযায়ী। ‘মোটর ভেহিক্যালস’ দফতরের তরফে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। বিনা হেলমেটের আরোহীকে ১৭৭ ধারায় ‘স্পট ফাইন’ করা যায়। পুলিশ-প্রশাসনের তরফেও ধরপাকড় হয়। সচেতনতা শিবিরও করা হয়। পুলিশ অবশ্য ‘স্পট ফাইন’ করতে পারে না। হেলমেট ছাড়া ধরা পড়লে পুলিশ মোটরবাইক আরোহীকে আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখানে ১৭৭ ধারায় জরিমানার বিধি রয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগাম খবর পেলে বিনা হেলমেটের আরোহী রাস্তা বদলে নেন। অথচ, বিপদের কথা ভাবেন না।’’

Advertisement

এ সব সত্ত্বেও কাজ না হওয়ায় গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বর্ধমানের জেলাশাসকের দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, জেলার পেট্রোল পাম্পগুলিতে জ্বালানি ভরতে গেলে মোটরবাইক আরোহী ও সঙ্গীদের মাথায় অবশ্যই হেলমেট থাকতে হবে। এ রাজ্যে প্রথম এই জেলাতেই এমন নিয়ম চালু হয়। সমস্ত তেল সংস্থার মাধ্যমে পেট্রোল পাম্পগুলিতে নির্দেশিকা জানিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। সব পেট্রোল পাম্পে লিখিত নির্দেশ সেঁটেও দেওয়া হয়। পাম্পের কর্মীরা হেলমেট না থাকলে তেল দেওয়া বন্ধ করেন তখনকার মতো।

(১) পথেই আড্ডা। দুর্গাপুরের জওহারলাল নেহরু রোডে। (২) ঝুঁকির যাত্রা। আসানসোলের জিটি রোডে।

কিন্তু কয়েক মাস যেতেই উদ্যোগে ভাটা পড়েছে বলে অভিযোগ। আগের মতোই বহু পেট্রোল পাম্পে হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া হচ্ছে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি পাম্পে বিনা হেলমেটের মোটরবাইক আরোহী তথা লিঙ্ক রোড এলাকার বাসিন্দা বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় তেল নিয়ে বেরোচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন আর কড়াকড়ি নেই। যখন খুশি তেল নিতে পারি।’’ স্টেশন যাওয়ার রাস্তার পাশে পেট্রোল পাম্পের এক কর্মী বললেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া তেল দিতে না চাইলে অনেকেই তর্ক করেন। নজরদারি কমায় রাশ কিছুটা তো আলগা হয়েছেই।’’

পেট্রোল পাম্প মালিকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়ম ডিলার্স’-এর বর্ধমান জোনের সম্পাদক বিশ্বদীপ রায়চৌধুরীর মতে, নিয়ম সব জায়গায় সমান ভাবে পালন না করা হলেই সমস্যা। তাঁর কথায়, ‘‘এক পাম্পে নিয়ম মানা হল, কিন্তু পাশের পাম্পেই হল না— এমন হলে ব্যবসায় সমস্যা হয়। নিয়ম সব জায়গা ঠিক ভাবে পালন হচ্ছে তা প্রশাসনের তরফে নিশ্চিত করা জরুরি।’’ জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন অবশ্য বলেন, ‘‘ওই নিয়ম যাতে ঠিক ভাবে মানা হয় তা জানিয়ে ইতিমধ্যে আর এক দফা চিঠি পাঠানো হয়েছে নানা তেল সংস্থাকে।’’

ছবিগুলি তুলেছেন বিকাশ মশান, শৈলেন সরকার ও ওমপ্রকাশ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement