ফ্যান ছা়ড়াই ক্লাস। নিজস্ব চিত্র
বিদ্যুৎ নেই, ক্লাসে তাই আলো জ্বলে না, ফ্যান চলে না। জলের অভাবে রান্না হয় না মিড-ডে মিল। এ ভাবেই চলছে কাটোয়ার ইস্টার্ন রেলওয়ে জেনারেল এফপি স্কুল।
বিদ্যালয় সূত্রে খবর, বছর পঁয়তাল্লিশ আগে রেল কর্মীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য কাটোয়া স্টেশন সংলগ্ন ‘ইস্টার্ন রেলওয়ে জেনারেল ইনস্টিটিউট’ সভাগৃহে চালু হয় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়া থেকে রান্না, সবই চলে ওই প্রেক্ষাগৃহেই। জানা যায়, ১৯৭৩-এ ইস্টার্ন রেলওয়ের তৎকালীন ডিভিশনাল সুপারিনটেনডেন্ট স্কুলের অ্যাডভাইজারি কমিটিতে মনোনয়ন পাঠিয়েছিলেন। তবে বছর পাঁচেক আগে স্টেশনের আধুনিকীকরণের জন্য ওই স্কুলকে সরে যেতে বলেন রেল-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। এরপরেই এ বছর ৯ই জানুয়ারি থেকে স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন রেল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ ও জলের অভাবে বর্তমানে সঙ্কটে ওই স্কুল, অসুবিধায় পড়ুয়ারাও।
শিক্ষক জয়দেব চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষিকা সৈয়দা সহেলি আফরোজরা জানালেন, প্রেক্ষাগৃহটি অন্ধকার। আলো জ্বালিয়ে ক্লাস চলতো। এখন অন্ধকারেই ক্লাস চলছে। জলের অভাবে রান্না বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২৫০ মিটার দূরে পঞ্চবটী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রান্না করা খাবার আনতে হচ্ছে। এ দিকে, বিদ্যুতের অভাবে টিনের ছাদের প্রেক্ষাগৃহে স্ট্যান্ড ফ্যানগুলিও চালানো যাচ্ছে না। ফলে তীব্র গরমে পড়ুয়ারা স্কুলমুখো হচ্ছে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মিতা বিশ্বাস বলেন, ‘‘জল না থাকায় শৌচাগারও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না, পাশে পুকুরে শৌচকর্ম করতে বাধ্য হচ্ছে ১২৮ জন পড়ুয়া।’’ ওই প্রেক্ষাগৃহেই চলা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিরও একই অবস্থা বলে জানালেন কেন্দ্রটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কাবেরী মোদক। জানালেন, বিদ্যুৎ না থাকায় অসুবিধা হচ্ছে পড়ুয়া, প্রসূতি মিলে ওই কেন্দ্রের ১২২ জনেরও। রেলের কোয়ার্টার কাছে হওয়ায় সেখান থেকে জল টেনে এনে এখনও রান্না হচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ির। কেন্দ্রটি চালানোর জন্য চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসারকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
মিতাদেবীর অভিযোগ, বছর তিনেক ধরে বারবার পুরসভা ও স্কুল পরিদর্শকের কাছে সমাধান চাওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বিদ্যুৎ ও জলসংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ বার রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হবে। পুরপ্রধান অমর রাম বলেন, ‘‘আপাতত পঞ্চবটী স্কুলের সঙ্গে ক্লাস চালাতে বলা হয়েছে ওই স্কুলকে।’’ রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ওপেন লাইন) প্রভাকর পাঠক বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, ইস্টার্ন রেলের জিআরএম-কে জানিয়েছি। স্থানান্তরের জন্য জমি দেখার কাজ চলছে। স্কুলের পঠনপাঠন যাতে বিঘ্নিত না হয় তার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন কাটোয়া পশ্চিম চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক জানবাস শেখ।