এই এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। কুলটির এই সমস্যা মেটাতে তৈরি হতে চলেছে একটি নতুন জল প্রকল্প। সম্প্রতি পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, দামোদরের জল ব্যবহার করে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই জল প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার।
পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য ৪০ শতাংশ করে টাকা দেবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। বাকি ত্রিশ কোটি টাকা খরচ করবে আসানসোল পুরসভা। এই পরিস্থিতিতে কুলটির বাসিন্দাদের কাছে যত দ্রুত সম্ভব বকেয়া কর জমা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে পুরসভা। সেই টাকা ওই জলপ্রকল্পে ব্যবহার করা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। প্রকল্প তৈরির তত্ত্বাবধান করবে আসানসোল পুরসভা।
কী ভাবে হবে এই প্রকল্পটি? পুরসভার জল দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুকোমল মণ্ডল শুক্রবার জানান, দামোদরের জল ব্যবহার করে প্রকল্পটি তৈরি হবে। নদীর মাঝে একটি বড় কুয়ো তৈরি করা হবে। সেখানে জামা হবে অপরিশোধিত জল। ওই জল পরিশোধনের জন্য নদীর পাড়েই তৈরি হবে ক্লোরিনেশন প্ল্যান্ট। সেই পরিশোধিত জল জমা করার জন্য ৫ লক্ষ গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরি হবে। সেই জলই পাম্পের সাহায্যে শহরের বিভিন্ন জায়গায় থাকা বিভিন্ন উচ্চ-জলাধারে পাঠানো হবে। বর্তমানে শহরে আটটি উচ্চ-জলাধার রয়েছে। আরও ন’টি উচ্চ-জলাধার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে পরিশোধিত জল উচ্চ-জলাধারগুলিতে তোলার জন্য শহর জুড়ে প্রায় ২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নতুন পাইপলাইনও বসবে। আবার বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহের জন্য প্রায় ৬৮ বর্গ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হবে।
তবে কুলটিতে জলপ্রকল্প তৈরির উদ্যোগ এই নতুন নয়। ২০০৬ সালে জল প্রকল্প তৈরির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের অধীনে প্রকল্প তৈরির খরচ ধরা হয় প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা। ঠিক হয়, প্রকল্প তৈরির জন্য নোডাল এজেন্ট করা হয় এডিডিএ-কে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ওই কাজে তখন তৃণমূল পরিচালিত সাবেক কুলটি পুরসভা বাধ সাধে। বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষমেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত টাকাও ফেরত চলে যায়।
ওই প্রকল্পের জন্য ২৭ কোটি টাকা খরচ করে ২০১১ সালে পাইপ কেনা হয়। ওই পাইপ চিনাকুড়ি ২ নম্বর-সহ লাগোয়া এলাকায় রাখা রয়েছে। শুক্রবার ওই পাইপগুলি অন্য একটি কাজে নিতে আসেন পুরসভার কর্মীরা। কিন্তু বাসিন্দারা তাঁদের আটকে দাবি জানান, আগে কুলটিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হোক, তারপরে পাইপ নিয়ে যাবেন।
নবনির্মিত আসানসোল পুরসভা তৈরির পরে কুলটির জল সমস্যা মেটাতে ফের উদ্যোগী হন শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। প্রকল্পের জন্য বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হয় রাজ্য সরকারের কাছে। পরে তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠায় রাজ্য সরকার। জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছে। যতে দ্রুত সম্ভব, প্রকল্প তৈরির কাজে হাত দেওয়া হবে।’’