উদ্বোধনের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র
উদ্বোধনেও ‘দু’ভাগ’ বর্ধমানের রেলসেতু।
আজ, মঙ্গলবার ওই সেতু উদ্বোধন করার কথা রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। সাত দিনের মাথায় ৩০ সেপ্টেম্বর ওই উড়ালপুল উদ্বোধনের কথা জানিয়েছে রেলও। যদিও পরস্পরের অনুষ্ঠান নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি কেউই।
জেলার মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের দাবি, ‘‘আমাকে পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ফোন করে সমস্ত ব্যবস্থা করতে বলেছেন। আমি জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের বিষয়টি দেখার কথা বলেছি।’’ মন্ত্রী সুব্রতবাবুও বলেন, ‘‘মঙ্গলবার পূর্ত দফতরের একটা অনুষ্ঠান রয়েছে বর্ধমানে। সেখানে আমি যাচ্ছি।’’ আর পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী দাবি করেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ওই সেতুর উদ্বোধন করবেন।
পুরনো রেলসেতু বন্ধ হওয়ার পর থেকেই চাপ বাড়ছিল। যানজট, বাস রাখা, যাত্রী তোলা-নামানোয় অসুবিধা এমনকি, পুজোর মুখে যাতায়াত সমস্যায় ব্যবসা কমারও আশঙ্কা করছিলেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার বিকেলে সেতু খুলে দেওয়ায় আচমকা সিদ্ধান্তে স্বস্তি খুঁজছেন তাঁরা। এ দিন সন্ধ্যায় ঘণ্টাখানেক ধরে সংযোগকারী পাঁচটি রাস্তা পরিদর্শন করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলাশাসক বিজয় ভারতী, পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও প্রশাসনের অন্য কর্তারা। জেলাশাসক শুধু বলেন, ‘‘আমরা পুরো এলাকার পরিদর্শন করেছি।’’
রেল ও পূর্ত দফতরের একাধিক যৌথ পরিদর্শনের পরে পুরনো রেলসেতুটিকে ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে প্রায় ৯০ বছরের পুরনো রেলসেতু বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। রেলের তরফে সেতুর দু’দিকে আড়াই মিটার উচ্চতার ‘হাইট বার’ লাগানো হয়। তার পরে থেকে পুরোপুরি বন্ধ ভারী ও মাঝারি যান চলাচল। এই ক’দিনে যানজট, বাসের রুটের বিভ্রান্তি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে পুলিশও। তার পরেও যানজট পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরাও দাবি করেন, আপাতত ১৫ দিন ছোট গাড়ি ও মোটরবাইক চালানোর অনুমতি মিলেছে রেলের কাছ থেকে। তবে কত দিন সে ভার টানতে পারবে ওই সেতু, তা সন্দেহের।
নতুন সেতু দিয়ে গাড়ি যাতায়াতে কোনও অসুবিধে নেই বলেও দাবি করেন তাঁরা। একই দাবি করেন ওই সেতুর নির্মাণকারী সংস্থা, রেলওয়ে বিকাশ নিগমের (আরভিএনএল) এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর রাজেশ প্রসাদ। তিনি বলেন, “সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলে কোনও অসুবিধা নেই বলে রাজ্য সরকার ও রেলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ফলে নতুন সেতুর উদ্বোধন নিয়ে প্রশাসনের উপর চাপ ছিলই।
জেলা প্রশাসনের একটা অংশের দাবি, সেতু দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করার মতো পরিস্থিতি রয়েছে, সে কথা জানিয়ে নবান্নে দু’বার চিঠি পাঠানো হয়েছে আগেই, কিন্তু উত্তর আসেনি। জেলা পুলিশের তরফেও দাবি করা হয়, পুরনো সেতু বন্ধের পরে বিকল্প ট্র্যাফিক পথ সামলাতে সেতুকে ঘিরেই শতাধিক পুলিশকর্মী কাজ করছেন। কিন্তু পুজোর সময়ে ওই সংখ্যায় পুলিশ এখানে রাখা সম্ভব নয়।
জেলা প্রশাসনের দাবি, সেতুতে ওঠার জন্য পাঁচটি সংযোগকারী রাস্তা রয়েছে। বর্ধমান পুরসভার দিকে, নবাবহাটের দিকে মেহেদিবাগান-লক্ষ্মীপুর মাঠের কাছে, কাটোয়া রোডের বাজেপ্রতাপপুরে, কাটোয়া রোডের শোলাপুকুরের দিকে এবং জেলাশাসকের বাংলোর সামনে দিয়ে ওই রাস্তাগুলি উঠছে। আজ, সবক’টি রাস্তারই উদ্বোধন হওয়ার কথা। স্বপনবাবুর দাবি, ‘‘পুজোর আগে বর্ধমানবাসীকে এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপহার।’’