ফোয়ারা সেচের মাধ্যমে জমিতে জল দেওয়া হচ্ছে কাঁকসায়। নিজস্ব চিত্র।
জলের অভাবে রবি মরসুমে খুব বেশি চাষের কাজ হয় না। যেখানে জলের ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে চাষাবাদ হলেও জলের অপচয়ও হয় প্রচুর। এই পরিস্থিতিতে জলের ঠিক মতো ব্যবহারের লক্ষ্যে কৃষি দফতর ‘বাংলা কৃষি সেচ যোজনা’য় জোর দিচ্ছে ফোয়ারা সেচে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, কাঁকসা ব্লকের বেশ কিছু জমিতে এই পদ্ধতিতে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কাঁকসা ব্লকে সব থেকে বেশি চাষাবাদ হয়। এমনকি, রবি মরসুমে নানা ধরনের আনাজ, ডাল শস্য, গম, সর্ষেরও চাষ হয় প্রায় দু’হাজার হেক্টর জমিতে। সম্পূর্ণ সেচের জলের উপর ভরসা করে রবি মরসুমে চাষের কাজ হয়। চাষিরা জানান, পুকুর, কুয়ো, নলকূপের জলে, সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল তুলে এই মরসুমে মূলত চাষ হয়। কিন্তু সেই জলকেও ঠিক ভাবে ব্যবহার না করার ফলে জলের অপচয় হত।
এই ‘অপচয়’ রোধ করতেই জরুরি ফোয়ারা সেচ, জানায় কৃষি দফতর। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমত, ফোয়ারা সেচের জন্য জলের উৎস থেকে একটি পাম্পের সাহায্যে পাইপ দিয়ে জল নির্দিষ্টি জমিতে দেওয়া হয়। ফলে, চিরাচরিত প্রথায় উৎস থেকে খেতে জল নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, জলের যে অপচয় হয়, তা রোধ করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, উৎস থেকে পাইপে জল নিয়ে যাওয়ার ফলে অল্প পরিমাণ জল বেশি পরিমাণ খেতে দেওয়া সম্ভব হয়। তৃতীয়ত, এই ব্যবস্থায় জল জমিতে সম ভাবে বণ্টন করা সম্ভব। চতুর্থত, গাছের যতটা জল প্রয়োজন ততটাই জল দেওয়া হয়। পঞ্চমত, এই পদ্ধতিতে সেচের কাজ তাড়াতাড়ি হওয়ায় ফলন বাড়ে। ষষ্ঠত, কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলার জমির চরিত্র অসম। ফলে, একই জমিতে বিভিন্ন জায়গার সম পরিমাণ জলগ্রহণের ক্ষমতা থাকে না। এর প্রভাব পড়ে ফলনেও। ফোয়ারা সেচে এই সমস্যা অনেকটাই দূর হবে বলে আশা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কাঁকসা ব্লকে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ফোয়ারা সেচের মাধ্যমে চাষ করছেন চাষিরা। শোকনা, বসুধা, বিষ্টুপুর, পিয়ারিগঞ্জ-সহ কয়েকটি এলাকার চাষিরা এই পদ্ধতিতে সেচ দিচ্ছেন জমিতে। স্থানীয় চাষি সন্ন্যাসী ঠাকুরা, মহাদেব ঘোষ, অসীম ঘোষেরা বলেন, ‘‘প্রথমে এই প্রকল্পটি নিয়ে খুব একটা ধারণা ছিল না।। কৃষি দফতরের সহযোগিতায় প্রকল্পটির বিষয়ে জানা সম্ভব হয়েছে। এই ব্যবস্থায় জল জমির সর্বত্র পৌঁছচ্ছে। গাছও বাড়ছে
খুব দ্রুত।’’
ব্লক সহ-কৃষি আধিকারিক (কাঁকসা) অনির্বাণ বিশ্বাস জানান, দিন-দিন ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমছে। অথচ, চাষের কাজে জল খুবই দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘ফোয়ারা সেচ সব দিক থেকেই কৃষিবান্ধব। আমরা সবসময় চাষিদের পাশেও আছি। আশা করি, ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিতে সেচের পরিমাণ আরও বাড়বে।’’