বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন। নিজস্ব চিত্র
উদ্বোধন হয়েছে সাড়ে তিন বছর আগে। তার পরেও তালাবন্ধ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের জন্য তৈরি পরিবেশবান্ধব নতুন ভবন। ভবনটির নানা জানলার কাচ ভেঙে পড়ছে। চারদিকে গজিয়েছে আগাছা। উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘নতুন ভবনে প্রশাসনিক কাজ শুরুর ক্ষেত্রে কিছু বাধা ছিল। বাধা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত নতুন ভবনে কাজ শুরু করা যাবে।’’
২০১৩-য় ‘মহতাব মঞ্জিল’-কে রাজ্য সরকার ঐতিহ্যবাহী ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকেই চেনা ভবন ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়। গোড়া থেকেই রাজ পরিবারের আবাসস্থলে গড়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৬-র ২২ সেপ্টেম্বর সেটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, পরীক্ষা নিয়ামকের দফতর বাদে সমস্ত বিভাগই নতুন ভবনে যাবে। সেই সময় আটতলা ভবনের মধ্যে পাঁচটি তলা সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথম পাঁচটি তলায় ৪৫টি ঘর রয়েছে। ভবন তৈরির জন্য রাজ্য সরকার ২২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছিল।
কিন্তু তার পরেও তা কেনই বা চালু হয় না, কেনই বা ‘মহতাব মঞ্জিল’ ছাড়তে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন ভবনটির চৌহদ্দি, ১৬,৫০০ বর্গমিটার। এর মধ্যে আটতলা ভবনটি গড়ে উঠেছে ১,২০০ বর্গমিটার জায়গার উপরে।
তবে ভবনের পাঁচতলা তৈরির পরে উদ্বোধন হলেও ঠিকা সংস্থার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন হস্তান্তর হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা জানান, ‘ইউটিলাইজেশন শংসাপত্র’ সময়ে জমা দিতে না পারায় অনুমোদিত খরচের ১৫ কোটি টাকার বেশি মেলেনি। তাই ঠিকা সংস্থার বকেয়া টাকা মেটানো যায়নি। তবে নতুন করে বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে নথিপত্র জমা করায় আরও পাঁচ কোটি টাকা মিলেছে। কিন্তু বাস্তুকার দফতর, বিদ্যুৎ দফতর ও দমকলের ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। চারটির বদলে দু’টি লিফ্ট বসানো হয়েছে। উপরের দিকে তিনটি তলার কাজ এখনও বাকি। এ ছাড়া ঠিকা সংস্থা এখনও ভবন হস্তান্তর করেনি বলে নতুন ভবনে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ছাড়পত্র দিতে রাজি নয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তাফাজল হোসেন বলেন, “রাজবাটি ও গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের মাঝের জায়গাতে নতুন ভবনটি রয়েছে। সেখানে কাজ শুরু হলে সবারই সুবিধা।’’ মহতাব মঞ্জিল যে সংস্থা তৈরি করেছিল, তাদের হাতেই নতুন ভবনটি গড়ে উঠেছে। সেখানে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জলের অপচয় রোধের ব্যবস্থা থাকছে। জানা যায়, ১৯৫৪-য় জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের অনুরোধে মহারাজা উদয় চন্দ ইতালীয় স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি রাজবাড়িটি সরকারের হাতে তুলে দিতে রাজি হন। বর্ধমানের সম্পত্তির মোট ৩২৩ একর সরকারের হাতে তুলে দেয় রাজ পরিবার। সেখানেই ১৯৬০-র ১৫ জানুয়ারি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয়।
কিন্তু প্রশাসনিক ভবন উঠে যাওয়ার পর মহতাব মঞ্জিলের ভবিষ্যৎ কী, সে প্রশ্নও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা রাজবাড়ি ঘুরে দেখেছেন। রাজবাড়ির ইতিহাস ও বর্ধমানের ইতিহাস ধরে রাখা হবে সেখানে। প্রত্নসংগ্রহশালা, আর্ট গ্যালারিকে আধুনিক মোড়কে সাজিয়ে পর্যটকদের কাছে তা তুলে ধরার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, খড়্গপুরের আইআইটি এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে।