পূর্বস্থলীর চরগোয়াল পাড়ার এই টিনের বাড়িতেই স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকত ধৃত যুবক। নিজস্ব চিত্র
গ্রামে গ্রামে বার্তাটা রটে গিয়েছে রবিবার রাত থেকেই।
পাড়ার মোড়ে জটলা, ‘‘এ তো পুরো সিনেমা গো! সেই সিনেমার ভিলেন কি না আমাদেরই গাঁয়ের ছেলে! ছিঃ!’’
চায়ের দোকানে চর্চা, ‘‘ছোটখাট চুরি-টুরি করত বলে শুনেছিলাম। তাই বলে মানুষ খুন!’’
পুকুরপাড়ে মহিলাদের ফিসফাস, ‘‘আমাদের পাড়ার কামা নাকি অনেক মেয়েমানুষকে খুন করে ধরা পড়েছে?’’
রবিবার কালনার সাধপুকুরের কাছে কামা ওরফে কামরুজ্জামান সরকারকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এই কামরুজ্জামানই একের পর এক মহিলাকে খুন করেছে।
সেই ঘটনা শোনার পর থেকেই চমকে উঠেছে মুর্শিদাবাদের রানিনগরের ফরাজিপাড়া। সোমবারেও গোটা এলাকায় আলোচনার একটাই বিষয় ছিল—কামরুজ্জামান।
বর্তমানে সে পূর্বস্থলীর গোয়ালপাড়ার কাছে সুজননগরে থাকে। সেখানেই তার শ্বশুরবাড়ি। তবে তার আদি বাড়ি রানিনগরের ফরাজিপাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রামে তার ছেলেবেলা কাটলেও পরে সে বাইরে চলে যায়। মাঝেমধ্যে গ্রামে এলেও সে কী করে, কোথায় থাকে সে ব্যাপারে কাউকেই কিছু জানাত না। পরিবারের কারও সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাল ছিল না বলেই জানা গিয়েছে।
তবে এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কামরুজ্জামান বরাবরই কম কথা বলত। একা থাকতেই বেশি পছন্দ করত। স্থানীয় বাসিন্দা জিয়ারুল মোল্লার কথায়, ‘‘ছেলেবেলা থেকেই বাড়ির কারও সঙ্গে ওর তেমন মিল-মহব্বত ছিল না। কখনও কখনও এলাকায় আসত। মোটরবাইকে ঘুরত। দামি সিগারেট খেত। ও যে ঠিক কী করত তা কেউই জানে না। শুনেছি চুরি-টুরিও করত। তবে গ্রামে ও কখনও কিছু করেনি। কিন্তু ও যে কাউকে খুন করতে পারে তা আমরা ভাবতেই পারছি না।’’
পরিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও কামরুজ্জামান বিয়ে করেছিল। তবে বছর পনেরো আগে সে বর্ধমানে ফের বিয়ে করে। মাঝে মধ্যে দশ, পনেরো দিনের জন্য দেশের বাড়িতে আসত। তবে বছর দুয়েক আগে নিজের তৈরি বাড়ি বিক্রি করে পাকাপাকি ভাবে সে বর্ধমানে থাকতে শুরু করে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন কামরুজ্জামানের অসুস্থ বাবা ও মা।
ছেলের এমন ঘটনা শুনে বাবা শামসুল হুদা বলছেন, ‘‘এমন ছেলে আমার চোখের সামনে না এলেই ভাল। ওর জন্য পাড়া-গাঁয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। শুনেছি, বাইরে চুরি ডাকাতি করে। জেলও খেটেছে। বহু বার নিষেধ করলেও কথা শোনেনি। এই নিয়ে বাড়িতে ওর সঙ্গে অশান্তিও হত। ও যদি অন্যায় করে থাকে তা হলে শাস্তি পাক।’’
কামরুজ্জামানরা আট ভাইবোন। স্থানীয় কোমনগর হাই মাদ্রাসায় সে লেখাপড়া করলেও মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরোয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘বরাবর ওর চালচলন রহস্যে মোড়া।’’ এখন সেই রহস্যেরই কিনারা করতে চাইছে পুলিশ।