বাঁ দিকে, বর্ধমানের এক কেন্দ্রে ঢুকছেন পরীক্ষার্থীরা। ডান দিকে, জাতীয় সড়কের ধারে অপেক্ষায় পরীক্ষার্থীদের নিয়ে আসা গাড়ি। ছবি: উদিত সিংহ ও জয়ন্ত বিশ্বাস
কেউ ঝুঁকি না নিয়ে আগের দিনই চলে এসেছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্রের শহরে। কেউ ভোরের আগেই রওনা দিলেন বাড়ি থেকে। কেউ আবার দীর্ঘ অপেক্ষার পরে বাস পেয়ে পরীক্ষা শুরুর মুখে কেন্দ্রে পৌঁছে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। রবিবার নিট পরীক্ষায় বর্ধমান ও পূর্বস্থলীর কেন্দ্রে নানা পরীক্ষার্থীর মুখে শোনা গেল এমন কথাই।
বর্ধমান শহরে একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল। সকাল থেকেই সেগুলির সামনে পরীক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য-বিধি মানতে কেন্দ্রে ঢোকার মুখে রাস্তায় গোল দাগ করা হয়েছিল। দূরত্ব রেখে প্রবেশ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। থার্মাল স্ক্রিনিং করে, হাতে ‘স্যানিটাইজ়ার’ দিয়ে তাঁদের কেন্দ্রে ঢোকানো হয়।
পরীক্ষার্থীদের অনেকেই জানান, গণ পরিবহণ ব্যবস্থা সে ভাবে সচল না থাকায় তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবে গাড়ি ভাড়া করে আসতে হয়েছে। পরিবহণের সমস্যার জন্য অনেকে অভিভাবককে নিয়ে শনিবারই শহরে চলে এসেছেন বলে জানান অনেকে। রাতে হোটেলে থেকে রবিবার পৌঁছে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে। বীরভূমের সিউড়ি থেকে আসা নাগমা শাহি বলেন, ‘‘শনিবার বিকেলেই বর্ধমানে চলে এসেছিলাম। একটি হোটেলে থেকে আজ পরীক্ষা দিতে এলাম।’’ হুগলির আরামবাগের শুভ্রা পাল জানান, তিনিও শনিবার শহরে এসে লজে থেকে এ দিন পরীক্ষা দিলেন।
মেমারির দেবীপুরের সন্দীপ ঘোষ জানান, ট্রেন না চলায় এ দিন ভোরে মোটরবাইকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছন তিনি। রায়নার শ্যামসুন্দরের বিশ্বজিৎ ঘোষ আবার জানান, ভোর থেকে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেকক্ষণ পরে বাস মেলে। পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে পৌঁছতে পেরে স্বস্তি ফিরেছে। শক্তিগড়-সহ জেলার নানা এলাকা থেকে অনেক পরীক্ষার্থী গাড়ি ভাড়া করে কেন্দ্রে আসেন।
পূর্বস্থলীর সুলুন্টুর বেথানি স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য শনিবার প্রায় মাঝ রাতে মামাতো বোনকে নিয়ে বেরিয়েছেন বলে জানান মুর্শিদাবাদের ধনাইপুরের বাসিন্দা মিজানুর শেখ সাজাত। ওই কেন্দ্রে মেয়েকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসা রামপুরহাটের সুবীরকুমার দে বলেন, ‘‘পূর্বস্থলীর পারুলিয়া এলাকা সহ কয়েকটি জায়গায় রাস্তা খারাপের জন্য পৌঁছতে কষ্ট হয়েছে।’’ পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনেও শুরুতে ধুলো উড়তে দেখা যায় বলে অভিযোগ করেন অভিভাবকেরা। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। অভিভাবকদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ গাড়িই এক সঙ্গে অনেককে নিতে চাইছে না। ফলে, মাথা পিছু গাড়ি ভাড়া বেশি পড়েছে। তিন-চার হাজার টাকা ভাড়া গুণে আসতে হয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকে।
কাটোয়ার অনেক পরীক্ষার্থীর কেন্দ্র ছিল রূপনারায়ণপুরে। রবিবার পৌঁছনো যাবে কি না, সে নিয়ে সংশয় থাকায় কয়েকজন শনিবারই সেখানে রওনা দেন। কাটোয়ার মাধবীতলার এক অভিভাবক বাবলি সরকার বলেন, ‘‘প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে পরীক্ষাকেন্দ্র। চিন্তায় ছিলাম। তাই শনিবার রূপনারায়ণপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে এসেছিলাম।’’
পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বড় অংশের দাবি, পরীক্ষার জন্য বাড়তি বাস বা ট্রেন চালালে তাঁদের হয়রান হতে হত না। তবে, শনিবার লকডাউন প্রত্যাহার হওয়ায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে বলে জানান তাঁরা। পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে মিটেছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।