Madhyamik 2023

মাধ্যমিক দিচ্ছেন মা-ছেলে, অনুপ্রেরণায় এমএ পাশ মেয়ে, শক্তিগড়ের দুই স্কুলছুট চান ভাল ফল

নিম্নবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান পারভেজ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় লেখাপড়ায় ইতি টানেন। তাঁর মা আয়েশা স্কুল ছেড়েছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। তখন তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শক্তিগড় শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:২২
Share:

এক সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন বহু কাল আগে স্কুলছুট মা ও ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।

এমএ পাশ মেয়ের ‘অনুপ্রেরণা’য় এ বার এক সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন বহু কাল আগে স্কুলছুট মা ও ছেলে। বর্ধমানের শক্তিগড়ের দুই পরীক্ষার্থী আশা করছেন ভাল ফল করবেন।

Advertisement

মেয়ে ফিরদৌসী উচ্চশিক্ষত। এমএ পাশ করেছেন। কিন্তু মা ও দাদা মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে পারেননি। তাই মা ও দাদাকে বলে বলে পড়তে বসাতেন ফিরদৌসী। মেয়ের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে আয়েশা বেগম এবং দাদা শেখ পারভেজ আলম এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মা ও ছেলের এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন পরীক্ষকরাও।

Advertisement

আয়েশার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষক। নিম্নবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান পারভেজের তাই বেশি দূর পড়াশোনা করা হয়নি। তবে বাড়ির ছোট মেয়ে, পারভেজের বোন ফিরদৌসী অবশ্য আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন। ইতিমধ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেছেন। এখন চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। নিজে উচ্চশিক্ষিত হলেও আইসিডিএস কর্মী মা এবং দাদার স্বল্পশিক্ষিত হয়ে থাকাটা তাঁকে ব্যথিত করত। মা-দাদাকে এক রকম জোর করেই পড়তে বসাতেন। বাড়ির ছোট সদস্যের কথায় দু’জনেই লেখাপড়া শুরুর ব্যাপারে মনস্থির করে ঘাটশিলা সিদ্দিকিয়া সিনিয়র হাই মাদ্রাসা স্কুলে ভর্তি হন। স্ত্রী ও ছেলে এক সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। এতে প্রচণ্ড খুশি সাইফুলও।

আয়েশার কথায়, ‘‘শৈশবটা খুব একটা সুখের ছিল না। মামার বাড়িতে কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। পড়াশোনা ছেড়েছি ২৫ বছর আগে। সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পরই লেখাপড়া ছাড়তে হয়। তার পর বিয়ে, সংসার।’’

২০১০ সালে বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজে যোগ দেন আয়েশা। বলেন,“সংসার আর আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ সামলেও যে লেখাপড়া করে যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় এই অনুপ্রেরণা পেয়েছি উচ্চশিক্ষিতা মেয়ের কাছে।’’

পারভেজ বলেন, ‘‘বোন এবং বাবার কথায় আবার বই-খাতা নিয়ে বসেছি। আসলে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অবস্থায় শুধুই মনে হত যে কোন কাজ করে উপার্জন করতে হবে। নয়তো সংসারটা ভেসে যাবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে কাজ করতাম।’’ মুম্বইয়ে অলঙ্কার তৈরির কাজ করতেন পারভেজ। কিন্তু লেখাপড়া ছাড়ার আক্ষেপটা থেকেই গিয়েছিল। আয়েশা এবং তাঁর ছেলে পারভেজ দু’জনেই জানান, এখনও পর্যন্ত সবক’টি বিষয়ে পরীক্ষা ভাল দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement