অসুস্থ বৃদ্ধা মমতা। নিজস্ব চিত্র।
দেবীপক্ষে চারিদিকে চলছে মা দুর্গাকে আবাহনের প্রস্তুতি। এ রকম সময়ই চিকিৎসা করাতে এনে অসুস্থ বৃদ্ধা মা-কে ফেলে পালানোর অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে। গুণধর সন্তানের এই কীর্তিতে অবাক পূর্ব বর্ধমানের গলসির নবখণ্ড গ্রামের বাসিন্দারা।
নবখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ছেলে সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার একটি রঙের কারখানায় কর্মরত। চিকিৎসা করাবে বলে অসুস্থ মা-কে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ৫ অক্টোবর হাওড়া নিয়ে আসেন সুপ্রিয়। হাওড়া এসেই মাকে অ্যাম্বুল্যান্সে ফেলে তিনি পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। অ্যাম্বুল্যান্স চালক জানিয়েছেন, বার বার ফোন করলেও ফোন ধরেননি সুপ্রিয়। তাই রাতভর অপেক্ষার পর ভোর বেলা অসুস্থ বৃদ্ধাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি।
কিন্তু ফিরে এসেও বিপত্তি। বাড়িতে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে গিয়েছে ছেলে। তাই গ্রামে ফিরেও ঘরে ঢুকতে পারছিলেন না বৃদ্ধা। পরে গ্রামবাসীরা তালা ভেঙে বৃদ্ধাকে তাঁর বাড়িতে ঢোকায়। শরীর খারাপ থাকায় গ্রামবাসীরাই তাঁকে নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। বৃদ্ধা জানিয়েছেন, হাওড়ায় চিকিৎসা করাতে যাওয়ার আগে একটি ব্যাগে নতুন কাপড়, নগদ ১৬ হাজার টাকা এবং একটি সোনার বোতাম নিয়ে গিয়েছেন তাঁর ছেলে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মমতার স্বামী মারা যাওয়ার পর সেই চাকরি পান সুপ্রিয়। তিনি মোটা টাকা মাইনে পান বলেও জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। হাওড়ার দক্ষিণ বাকসাড়ার যে বাড়িতে সুপ্রিয় থাকেন সেটি মমতার নামে। ছেলের ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে হাওড়ার ওই বাড়ি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।
এই ঘটনায় বিরক্ত মমতার প্রতিবেশীরা। নবখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা সবিতা চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এত বয়স হল। এ ভাবে মাকে পরিত্যাগের কথা আগে কখনও শুনিনি।’’ অপর বাসিন্দা অম্বিকা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘কুলাঙ্গারটার কথা শুনেছি। এ বার নিজের চোখে তাঁর কাণ্ড দেখলাম।’’ বৃদ্ধার শরীরের অবস্থা এখন বেশ খারাপ। ছেলে সব নিয়ে চলে যাওয়ায়, হাতে টাকাও নেই তাঁর। গ্রামের মানুষই গত কয়েক দিন তাঁর খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই ঘটনার পর বিষাদের সুরে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আর কিছু চাই না। শুধু দু’মুঠো খেতে চাই।’’